বিষয়ভিত্তিক মাসায়ালা
চাঁদ দেখা সংক্রান্ত মাসায়েল :
মাসআলাঃ চাঁদ উদয়স্থান যদি মেঘাচ্ছন্ন হয় তবে এমন একজন সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, বালেগ ও মুসলমান ব্যক্তির (চাই পুরুষ হোক অথবা মহিলা) চাঁদ দেখার দারাই রমযানের চাঁদ প্রমানিত হবে,যার দ্বীনদার হওয়া স্বীকৃত। কাজেই উক্ত অবস্থায় একজন পাগল, নাবালেগ,অমুসলিম অথবা প্রকাশ্য ফাসেকের চাঁদ দেখা দ্বারা রমজানের চাঁদ প্রমাণিত হবে না।
মাসআলাঃ চন্দ্র উদয়স্থল পরিষ্কার হলে এমন সংখ্যক লোকের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দেওয়া জরুরী যার দ্বারা চাঁদ উঠার প্রবল বিশ্বাস সৃষ্টি হয়।
মাসআলাঃ কেউ নিজে চাঁদ দেখলে যদি তার সাক্ষ্য গ্রহন না করা হয়, তবে সেক্ষেত্রে তার নিজের জন্য রোযা রাখা ফরজ । তবে ঈদ সে অন্যান্য মানুষের সাথেই আদায় করবে । চাই তার রোযা ৩১ টি হোক না কেন।
মাসআলাঃ অনেকে শাবান মাসের ৩০ তারিখে এই নিয়তে রোযা রাখে যে, যদি রমযান শুরু হয়ে থাকে তবে রমযানের রোযা অন্যথ্যায় নফল রোযা হবে। এভাবে এই দিনে রোজা রাখা মাকরূহ । তবে কেউ যদি পূর্ব থেকেই এভাবে রোযা রাখতে অভ্যস্ত হন (যেমন তিনি প্রতি মাসেই শেষ তিনদিন রোযা রাখেন ) তবে তার জন্য জায়েয।
মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি একদেশে রোযা শুরু করল। এরপর সে অন্য একটি দেশে সফর করল । সেখানে গিয়ে দেখল ঐ দেশবাসীর রোযা তার থেকে একটি বেশি হয়েছে এবং তার ২৮ টি রোযা পূর্ণ হওয়ার পর ঈদ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেমন কেউ বাংলাদেশ থেকে সৌদিআরব গেলে এমনটি হতে পারে। এক্ষেত্রে তার করনীয় কী ?
অনুরুপভাবে কেউ সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এসে দেখল তার থেকে বাংলাদেশবাসীদের রোযা একটি কম হচ্ছে । এক্ষেত্রে তার রোযা ৩১ টি হতে পারে । সে কী করবে ?
এমতাবস্থায় প্রথম ব্যক্তি অর্থাৎ যার রোযা ২৮টি হয়েছিল সে ঐ দেশবাসীর সাথেই ঈদ পালন করবে এবং পরবর্তিতে ১ টি বা ২টি রোযা রেখে ৩০টি পূর্ণ করে নিবে । তবে ওই দেশে ( যেখানে সে সফর করে গিয়েছে ) যদি ২৯টি রোযা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সে ২৯টি পুরা করতে পারবে।
আর দ্বিতীয় ব্যক্তি ঐ দেশবাসীর সাথে রোযা রাখতে থাকবে । যদিও তার রোযা ৩১টি হয়ে যায় । যাতে রমযানের সম্মান নষ্ট না হয় । পরে তাদের সাথেই ঈদ করবে।
মাসআলাঃযেসব স্থানে দিন-রাত সাভাবিক নয় (যেমন ছয় মাস দিন এবং ছয় মাস রাত থাকে) সেসব স্থনের লোক কিভাবে রোযা রাখবে ?
যেসব দেশে দিন-রাত ভারসাম্য পূর্ণ নয় সেখানকার লোকেরা তাদের পাশ্ববর্তি ভারসাম্যপূর্ণ দেশের সাথে তুলনা করে রোযা রাখবে । অর্থাৎ তারা যেভাবে রোযা রাখে উক্ত দেশের লোকেরাও সেভাবে রোযা রাখবে।
সাহরি -ইফতার সম্পর্কিত মাসায়েল
১. প্রতিটি কাজের পূণ্য ও প্রতিদান নিয়তের উপর নির্ভরশীল। তাই সাওমের জন্য নিয়ত করা আবশ্যক। (বুখারি-১, মুসলিম-২৫৮২)
২. রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোযা হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী ২০০৭, মুহাল্লা ৪/২৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৬)
৩. সিয়াম পালনকারির জন্য সাহরি খাওয়া সুন্নাত।(বুখারি: হাদিস-১৯২৩, মুসলিম: হাদিস-২৬০৩)
৪. রমযানের প্রত্যেক দিনেই ঐ দিনের রোযার নিয়ত করা জরুরি। একদিনের নিয়ত পুরো মাসের রোযার জন্য যথেষ্ট নয়।(দুররে মুখতার: ২/৩৭৯)
৫. যদি কেউ রোযার নিয়ত ব্যতীত এমনিতেই সারা দিন না খেয়ে থাকে, তাহলে এটা রোযা বলে ধর্তব্য হবে না। (রদ্দুল মুহতার: ২/৩৭৭)
সাহরি
৪. সুবহে সাদিকের পর খানা-পিনা যায়েজ নেই। আযান হোক বা না হোক। লোক মুখে যে প্রচলিত রয়েছে যে, সুবহে সাদিকের পরেও আযান পর্যন্ত খাওয়া যায় তা সম্পূর্ণ ভুল। (রদ্দুল মুহতার:২/৪১৯)
ইফতার
৫. ইফতারের জন্য সূর্যাস্ত হওয়া আবশ্যক। সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে সাওম আদায় হবে না।
(বুখারি-১৮১৫)
৯১. রোযাদারকে ইফতার করালে রোযাদারের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। (তিরমিযি-৮০৭)
৯২. কেউ যদি মেঘের কারণে সূর্যাস্ত হয়েছে ভেবে ইফতার করে এবং পরে একথা জানতে পারে যে তখন ইফতারের সময় হয়নি। তবে সে রোযা কাযা আদায় করবে। (বুখারি-১৮২০)
নিয়তের মাসআলাঃ
মাসআলাঃ রমজানের রোযার জন্য নিয়ত করা ফরজ। প্রতিটি রোযার জন্য আলাদাভাবে নিয়ত করা জরুরী। পুরো মাসের জন্য একবার নিয়ত করলে তা যথেষ্ট হবে না ।
মাসআলাঃ নিয়ত হল মনের ইচ্ছা । কাজেই মনে মনে এই সংকল্প করবে যে, অমি আজ রোযা রাখছি । মুখে নিয়ত করা জরুরী নয় বরং উত্তম। মুখে নিয়ত করলে এভাবে করবে আমি আজ রোযা রাখার নিয়ত করলাম।
মাসআলাঃ কেউ যদি রোযার নিয়ত ব্যতীত সারাদিন না খেয়ে থাকে তবে তা রোযা হিসেবে ধর্তব্য হবে না।
মাসআলাঃ রোযার নিয়ত রাতে করা উত্তম । তবে ফরয রোযার ক্ষেত্রে সূর্য ঢলে পড়ার পূর্ব পযন্ত নিয়ত করার অবকাশ রয়েছে। নফল রোযার ক্ষেত্রেও একই হুকম। তবে কাযা রোযার ক্ষেত্রে সুবহে সাদিকের পূর্বে নিয়ত করা জরুরী।
মাসআলাঃ নিয়ত করার শুরু সীমা হল পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে । কাজেই এর পূর্বে কেউ নিয়ত করলে তা সহীহ হবে না।
মাসআলাঃ রমযান মাসে অন্য যে কোন রোযার নিয়ত করলেও এই রমজানের রোযা আদায় হবে। অন্য রোযা আদায় হবে না।
সাহরীর মাসায়েল :
মাসআলাঃ সাহরী খাওয়া সুন্নত এবং ইহা একটি বরকতপূর্ণ কাজ । তাই পেট ভরা থাকলেও ফযীলত ও বরকত হাছিলের জন্য অন্তত এক ঢোক পানি হলেও খেয়ে নিবে।
মাসআলাঃ সাহরী এমন সময় খাওয়া শেষ করা সুন্নত যার অল্প কিছু সময় পরে সুবহে সাদিক হয় । তবে এত বিলম্ব করা জায়েয নেই যে, রোযার ব্যাপারেই সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
মাসআলাঃ সুবহে সাদিকের পর খানা – পিনা জায়েয নেই। চাই আযান হোক বা না হোক । অনেকে মনে করে আযানের পূর্ব পর্যন্ত খাওয়া যায় । যা সম্পূর্ন ভুল ধারনা । কেননা আযান সুবহে সাদিকের পরে দেওয়া হয়। কাজেই কেউ যদি আযানের পূর্ব পর্যন্ত খেতে থাকে তবে তার খাওয়ার শেষ অংশ সুবহে সাদিকের মধ্যে পড়াই স্বাভাবিক । এমতাবস্থায় তার ঐ দিনের রোযা পরবর্তিতে ক্বাযা করে নেওয়া জরুরী।
মাসআলাঃ কোন কারনে সাহরী খেতে না পারলেও রোযা রাখতে হবে। একারনে রোযা ছেড়ে দেওয়া মারাত্ত্বক গুনাহ।
ইফতার-এর মাসআলাঃ
মাসআলাঃ ইফতার করা সুন্নত । সুর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ইফতার করা সুন্নত। ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করে ইফতার করা মাকরূহ।
মাসআলাঃ ইফতারের পূর্বে নিম্নোক্ত দুআটি বেশী বেশী পড়বে।
يا واسع الفضل اغفرلي
(অর্থ: হে মহান ক্ষমা দানকারী!আমাকে ক্ষমা করুন)
মাসআলাঃ ইফতার খেজুর বা খুরমা দ্বারা করা সুন্নত । খেজুর না পেলে পানি দ্বারা করবে।
মাসআলাঃ ইফতার সাধারন খানা খাওয়ার দুআ পড়েই শুরু করবে। এরপর নিম্নোক্ত দুআ দুটি পড়বে:
اللهم لك صمت و علي رزقك افطرت
(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোযা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করলাম )
কেউ কেউ মনে করে এই দুআটি ইফতার শুরু করার পূর্বে পড়তে হয়। অথচ তা সহীহ নয়। বরং হাদীসে ইফতার এর পরেই পড়ার কথা এসেছে।
ذهب الظمأ و ابتلت العروق و ثبت الاجر ان شاء الله
(অর্থ: পিপাসা দূরিভূত হয়েছে, ধমনীসমূহ সতেজ হয়েছে এবং রোযার ছাওয়াব নিশ্চিত হয়েছে ইনশা আল্লাহ)
আর ইফতারীর দাওয়াত খেলে মেযবানকে শুনিয়ে এই দুআ পড়বে –
افطر عندكم الصائمون و اكل طعامكم الابرار و صلت عليكم الملائكة
(অর্থঃ রোযাদারগন যেন তোমাদের বাড়িতে ইফতার করে এবং নেক লোকেরা যেন তোমাদের খানা খায় আর ফেরেশতাগন যেন তোমাদের জন্য রহমতের দুআ করে)
গোসল
১) গোসল করলে পানির শীতলতা, ঠান্ডা ভিতরে অনুভুত হলেও রোযা ভাঙ্গবে না।
(আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২৩০)
২) রোযা অবস্থায় গোসল করলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না। তবে কুলী করার সময় গড়গড়া করবে না এবং নাকে পানি দেয়ার সময় নাকের মধ্যে জোরে পানি টানবে না। (দুররে মুখতার: ২/৪১৯)
৩) ‘জানাবত’ (অর্থাৎ গোসল ফরয হবার) অবস্থায় কারো ভোর হলো, বরং গোটা দিনই ‘জুনুব’ (অর্থাৎ গোসল বিহীন) রয়ে গেলো, তবুও রোযা ভাঙ্গেনি।
(আদ দুররুল মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৭২)
কিন্তু এত দীর্ঘক্ষণ যাবত ইচ্ছাকৃতভাবে(অর্থাৎ জেনে বুঝে) গোসল না করা, যাতে নামায কাযা হয়ে যায়, গুনাহ ও হারাম।
★হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে ঘরে ‘জুনুবী’ থাকে সে ঘরে রহমতের ফিরিশতা আসে না।”
(বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৫ম, পৃ-১১৬)
কসমেটিক্স-প্রসাধনীর ব্যবহার
১. রোযাদারের জন্য সুরমা লাগানো বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মাকরূহ নয়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮০)
২. শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলে রোযা ভাঙ্গবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক: ৪/৩১৩; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৩৯৫; আলবাহরুর রায়েক: ২/১৭৩)
৩ শিঙ্গা লাগালো (📌) কিংবা তেল অথবা সুরমা লাগালো, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না; যদিও তেল কিংবা সুরমার স্বাদ কণ্ঠনালীতে অনুভুত হয়, এমনকি যদি থুথুুর মধ্যে সুরমার রঙও দেখা যায়, তবুও রোযা ভাঙ্গবে না।
(আল-জাওহারাতুন্ নাইয়ারাহ, খন্ড-১ম, পৃ-১৭৯)
📌 এটা ব্যথার চিকিৎসার একটা বিশেষ পদ্ধতি, যাতে ছিদ্র শিং ব্যথাগ্রস্ত স্থানে রেখে মুখ দিয়ে শরীরের দুষিত রক্ত টেনে বের করা হয়।
কানের ওষুধ
১) কানে তেল বা ওষুধ প্রবেশ করালে রোজা ভেঙে যাবে। এতে শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। কাফফারা ওয়াজিব হবে না। তবে গোসল করার সময় যদি অনিচ্ছাবশত কানে পানি প্রবেশ করে, তাহলে রোজা ভাঙবে না। (রদ্দুল মুহতার: ২/৩৯৬)
চোখের ওষুধ
২) রোজা অবস্থায় চোখে ড্রপ ব্যবহারের দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হবে না; যদিও ওষুধের স্বাদ মুখে অনুভূত হয়। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী: ১/২০৩)
৩) চোখে ওষুধ-সুরমা ইত্যাদি লাগালে রোযার কোনো ক্ষতি হয় না। (সুনানে আবু দাউদ ১/৩২৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫)
নাকের ওষুধ
৪) নাকে ওষুধ বা পানি দিলে তা যদি গলার ভেতরে চলে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। মলদ্বারের ভেতর ওষুধ বা পানি ইত্যাদি গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এক্ষেত্রে (অসুস্থতার দরুন) রোযা কাযা আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪০২)
বমি সংক্রান্ত মাসায়েল
১) অনিচ্ছাকৃত বমি করলে রোযা ভাঙ্গে না। (আবু দাউদ-২৩৮০)
২) যে ইচ্ছাকৃত বমি করল সে রোজা কাযা করবে। (তিরমিজী: ৭২০, আবু দাউদ:২৩৮০)
৩) রোযা অবস্থায় যদি নিজে নিজে কয়েকবার বমি এসে যায়। (চাই বালতি ভরে হোক)- এর কারণে রোযা ভাঙ্গে না।
(দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৯২)
৪) যদি রোযার কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও স্বেচ্ছায় (জেনে বুঝে) বমি করলো, আর যদি তা মুখ ভর্তি করে আসে, (মুখ ভর্তির সংজ্ঞা সামনে আসছে), তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৯২)
৫) ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভর্তি বমি হওয়ার ক্ষেত্রে ঐ সময় রোযা ভেঙ্গে যাবে যখন বমির সাথে খানা অথবা পানি বা হলুদ ধরনের তিক্ত ঝাঁঝালো পানি অথবা রক্ত আসে।
৬) যদি বমিতে শুধু কফ বের হয়, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না।
(দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৯৪)
৭) ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলো; কিন্তু সামান্য বমি আসলো, মুখ ভর্তি হয়ে আসেনি, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না।(দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৯৩)
৮) মুখে বমি চলে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে। যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়।(আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৫)
৯) মুখভর্তি অপেক্ষা কম বমি হলে মুখ থেকে ফিরে গেলো। কিংবা নিজেই ফিরিয়ে দিয়েছে। এমতাবস্থায়ও রোযা ভাঙ্গবে না। (দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৯৩)
১০) বিনা ইচ্ছায় মুখভর্তি বমি হয়ে গেলো রোযা ভাঙ্গবে না। অবশ্য, যদি তা থেকে একটা বুটের সমানও গিলে ফেলা হয়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর এক বুটের পরিমাণের চেয়ে কম হলে রোযা ভাঙ্গবে না।
(দুররে মুখতার, খন্ড-২য়, পৃ-৩৯২)
১১) মুখভর্তি বমির অর্থ হচ্ছে- সেটা অনায়াসে চলে আসে, যা চেপে রাখা যায় না। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৪)
অন্যান্য
৫) রোজা অবস্থায় রক্ত দিলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। [তবে নিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে] (ফাতহুল কাদির: ৪/৩২৭)
৬) ওষুধ দাঁতে কাটলো, কণ্ঠনালীতে সেটার স্বাদ অনুভুত হলেও রোযা ভাঙ্গবে না।
(রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬৭)
৭) পেটের এমন ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগালে রোযা ভেঙ্গে যাবে, যা দিয়ে ওষুধ পেটের ভেতর চলে যায়। বিশেষ প্রয়োজনে এমন ক্ষতে ওষুধ লাগালে পরে সে রোযার কাযা করে নিতে হবে।(ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪০২)
৮) রোযার কারণে যে রোগ বৃদ্ধি পায় বা রোগ-ভোগ দীর্ঘ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে সে রোগে রোযা ভাঙ্গার অবকাশ আছে। উল্লেখ্য, আশঙ্কা যদি সুস্পষ্ট হয় তাহলে তো কথা নেই। নতুবা একজন অভিজ্ঞ ও দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামতের প্রয়োজন হবে। (আলমুহীতুল বুরহানী: ৩/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪২২)
৯) যে বৃদ্ধ বা অসুস্থ ব্যক্তির রোযা রাখার সামর্থ্য নেই এবং পরবর্তীতে কাযা করতে পারবে এমন সম্ভাবনাও নেই এমন ব্যক্তি রোযার পরিবর্তে ফিদয়া প্রদান করবে। (সূরা বাকারা: ১৮৪, মুসান্নাফে আবদুর রাযযযাক: হাদীস : ৭৫৭০)
১০) রমযান মাসের দিনে বা রাতে কেউ যদি বেহুঁশ হয়ে যায় এবং তা যদি কয়েকদিন বা অবশিষ্ট পুরো মাস পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে প্রথম যে দিন বেহুঁশ হয়েছে ঐ দিন বাদ দিয়ে বাকী দিনগুলীর রোযার কাযা করতে হবে।(দুররে মুখতার: ২/৪৩২)
১১) কেউ রোযা রাখার পর মারাত্নক অসুস্থ হয়ে গেলে অথবা পূ্র্বের রোগ বেড়ে যাওয়ার প্রবল ধারণা হলে রোযা ভাঙ্গা যায়েয আছে। পরবর্তীতে কাযা করতে হবে। একান্ত কাযা করার শক্তি না পেলে উক্ত রোযার ফিদয়া দিতে হবে অর্থাৎ, প্রত্যেক রোযার বদলে একজন গরীবকে দু’বেলা খাওয়াতে হবে বা পৌনে দু’সের আটা কিংবা তার মূল্য গরীবকে দিতে হবে। (দুররে মুখতার: ২/৪২২)
মান্নত এর রোজা
১) কেউ যদি আল্লাহর নামে রোযা রাখার মান্নত করে তাহলে সেই রোযা রাখা ওয়াজিব হয়ে যায়। তবে কোন শর্তের ভিত্তিতে মান্নত মানলে সেই শর্ত পূরণ হওয়ার পূর্বে ওয়াজিব হয় না- শর্ত পূরণ হলেই ওয়াজিব হয়। (রদ্দুল মুহতার)
২) কোন নির্দিষ্ট দিনে রোযা রাখার মান্নত করলে এবং সেই দিন রোযা রাখলে রাত্রেই নিয়ত করা জরুরী নয়, দুপুরের এক ঘন্টা পূর্বে পর্যন্ত নিয়ত করা দুরস্ত আছে। ( ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
৩) কোন নির্দিষ্ট দিনে, তারিখ বা মাসে রোযা রাখার মান্নত করলে সেই নির্দিষ্ট দিনে বা তারিখে বা মাসে রোযা রাখাই জরুরী নয়। অন্য যে কোন সময় রাখলেও চলবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
৪) কোন দিন তারিখ নির্দিষ্ট করে মান্নত না করলে যে কোন দিন সে মান্নতের রোযা রাখা যায়। এরূপ মান্নতের রোযার নিয়ত সুবহে সাদেকের পূর্বেই হওয়া শর্ত। ( ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
৫) যদি এক মাস রোযা রাখার মান্নত করে তাহলে পুরো এক মাস লাগাতার রোযা রাখতে হবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
নারীদের জন্য রোজার মাসায়েল
১) ঋতুবতী মহিলা সাওমের কাযা করবে কিন্তু সালাতের কাযা করবে না। (সহীহ বুখারী:হাদীস নং ৩২১, সহীহ মুসলিম: হাদীস নং ৩৩৫)
২) গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারি মহিলা রোজার কারণে যদি তাদের নিজেদের অথবা সন্তানদের ক্ষতির আশংকা হয় তাহলে তাদের জন্য রোজা রাখা ওয়াজিব নয়। তবে তারা যে ক’দিন রোজা রাখেতে পারেনি সে ক’দিনের কাজা করবে। আর যদি কোন নারী শুধু সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় রোজা হতে বিরত থাকে তবে তাকে কাজা করার সাথে সাথে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খানা খাওয়াতে হবে।
(সুরা বাকারাহ,আয়াত-১৮৪)
৩) বাচ্চাকে দুধ পান করালে রোযার কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু নামায অবস্থায় দুধ পান করালে নামায ভেঙ্গে যায়। (দুররে মুখতার: ২/৩৭১)
৪) ঋতুবতী কোন মহিলার যদি দিনের বেলায় স্রাব বন্ধ হয়ে যায় তাহলে দিনের বাকী সময় খানাপিনা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। আর কোন মহিলার রোযা অবস্থায় ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে তার জন্য উপবাস থাকা যায়েয নেই। বরং সে চুপে চুপে খানা-পিনা করবে এবং পরবর্তীতে রোযাগুলির কাযা করবে। (দুররে মুখতার: ২/৪০৮, ইমদাদুল আহকাম: ২/১৩৯)
৫) যদি কোন মহিলা ঔষধ সেবন করে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখে তাহলে তাকে পুরো মাসই রোযা রাখতে হবে। তবে স্বাভাবিক নিয়মের বিপরীত করার দরুণ কাজটি ঠিক হবে না। (ফাতাওয়া রহিমিয়া: ৬/৪০৪)
থুথু-কফ-শ্লেষ্মা-সরিষা পরিমাণ কিছু গিলে ফেলা
১) সরিষা কিংবা সরিষার সমান কোন জিনিষ চিবালে, আর থুথুর সাথে কণ্ঠনালী দিয়ে নিচে নেমে গেলে, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না। কিন্তু যদি সেটার স্বাদ কণ্ঠনালীতে অনুভূত হয়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(ফতহুল কাদীর, খন্ড-২য়, পৃ- ২৫৯)
২) থুথুু কিংবা কফ মুখে আসলে সেটা গিলে ফেললো, রোযা ভাঙ্গবে না।
(রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৭৩)
৩) অনুরূপভাবে নাকে শ্লেষ্মা জমা হয়ে রইলো। তা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে টেনে গিলে ফেললেও রোযা ভাঙ্গবে না।
(রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৭৩)
৪) কুলি করে পানি ফেলে দিলো। শুধু কিছুটা আর্দ্রতা মুখে অবশিষ্ট রয়ে গেলো, থুথুুর সাথে তা গিলে ফেলল, রোযা ভাঙ্গবে না।
(রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬৭)
অনিচ্ছাকৃত ভুল সংক্রান্ত মাসায়েল
১) রোযাদার ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে তাহলে সে তার সাওম পুরা করে নিবে। (সহিহ বুখারি: হাদিস-১৯৩৩)
২) ভুল করে খাবার খাচ্ছিলো। মনে হতেই লোকমা ফেলে দিলে কিংবা পানি পান করছিলো, স্মরণ হতেই মুখের পানি ফেলে দিলো। তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না। কিন্তু যদি মুখের ভিতরের লোকমা কিংবা পানি স্মরণ হওয়া সত্ত্বেও গিলে ফেলে তবে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৩)
৩) সুবহে সাদিকের পূর্বে আহার কিংবা পান করছিলো, আর ভোর হতেই (অর্থাৎ সাহারীর সময়সীমা শেষ হতেই) মুখের ভিতরের সবকিছু ফেলে দিল, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না, আর যদি গিলে ফেলে তবে ভেঙ্গে যাবে। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৩)
৪) অযু বা গোসলের সময় রোযার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং রোযা কাযা করতে হবে। তাই রোযা অবস্থায় অযু-গোসলের সময় নাকের নরম স্থানে পানি পৌঁছানো এবং গড়গড়াসহ কুলি করবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৩৬৩ সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৭৮৫)
৫) যা সাধারণত আহারযোগ্য নয় বা কোনো উপকারে আসে না, তা খেলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও ইকরিমা রাহ. বলেন, ‘(পেটে) কোনো কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভেঙ্গে যায়। কোনো কিছু বের হওয়ার দ্বারা রোযা ভাঙ্গে না।’ (সহীহ বুখারী ১/২৬০ (তা’লীক); বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪১০)
৬) রোযা রাখা অবস্থায় ভুলবশত পানাহার করে রোযা নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কাযা করা জরুরি হবে। অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়ার কারণে রোযা নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে রোযা ভেঙ্গে ফেললে কাযা করতে হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৪৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬/১৫০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৬)
৭) ভুলবশতঃ আহার করলে, পান করলে কিংবা স্ত্রী সহবাস করলে রোযা ভাঙ্গে না, চাই ওই রোযা ফরয হোক কিংবা নফল।
(আদ-দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬৫)
★হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ থেকে বর্ণিত, তাজেদারে মদীনা হযরত মুহাম্মদ ﷺ ইরশাদ করেন, “যে রোযাদার ভুলবশতঃ পানাহার করেছে, সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে। কারণ, তাকে আল্লাহ তাআলা পানাহার করিয়েছে।
(সহীহ বোখারী, খন্ড-১ম, পৃ-৬৩৬, হাদীস নং-১৯৩৩)
৮) কোন রোযাদারকে এসব কাজে করতে দেখলে স্মরণ করিয়ে দেয়া ওয়াজিব। যদি আপনি স্মরণ করিয়ে না দেন তবে গুনাহগার হবেন। হাঁ, যদি রোযাদার খুবই দুর্বল হয়, কিন্তু স্মরণ করিয়ে দিলে পানাহার ছেড়ে দেবে, যার ফলে তার দূর্বলতা এতোই বেড়ে যাবে যে, তার জন্য রোযা রাখা কঠিন হয়ে যাবে, আর পানাহার করে নিলে রোযাও ভালোমতে পূর্ণ করে নেবে এবং অন্যান্য ইবাদতও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, (যেহেতু সে ভুলে পানাহার করছে, এ কারণে তার রোযাও পূর্ণ হয়ে যাবে।)
এমতাবস্থায়, স্মরণ করিয়ে না দেয়াই উত্তম। কোন কোন মাশাইখ কিরাম ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ বলেন, “যুবককে দেখলে স্মরণ করিয়ে দেবেন, আর বৃদ্ধকে দেখলে স্মরণ করিয়ে না দিলেও ক্ষতি নেই।” কারণ, যুবক বেশিরভাগই শক্তিশালী হয়ে থাকে। আর বুড়ো হয় বেশিরভাগ দুর্বল। সুতরাং বিধান হচ্ছে এ যে, যৌবন ও বার্ধক্যের কোন কথা এখানে নেই, বরং সক্ষম হওয়া ও দুর্বলতাই এখানে বিবেচ্য। অতএব যুবকও যদি এ পরিমাণ দূর্বল হয়,তবে স্মরণ করিয়ে না দেয়ার মধ্যে কোন ক্ষতি নেই। আর বয়স্ক অথচ যদি শক্তিশালী হয় তবে স্মরণ করিয়ে দেয়া ওয়াজিব।
(রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬৫)
৯) মশা-মাছি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটের ভেতর ঢুকে গেলেও রোযা ভাঙ্গবে না। অনুরূপ ধোঁয়া বা ধুলোবালি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা পেটের ভেতর ঢুকে গেলে রোযা ভাঙ্গবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ৬/৩৪৯; রদ্দুল মুহতার: ২/৩৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৩)
সফর
১) মুসাফির অবস্থায় রোযা রাখা কষ্টকর না হলে রোযা রাখা বা কাযা করার মধ্যে যেটা সহজ সেটা করবে। রোযা রাখতে চাইলে রাখবে অন্যথা কাযা করবে। (বুখারি-১৯৪৩, মুসলিম-১১২১)
২) সফরের হালতে রোযা রাখা শুরু করলে তা আর ভাঙ্গা জায়েয নয়। কেউ ভেঙ্গে ফেললে গুনাহগার হবে। তবে কাফফারা আসবে না। শুধু কাযাই যথেষ্ট। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া: ৩/৪০৩; রদ্দুল মুহতার: ২/৪৩১)
৩) সফরে যদি কষ্ট হয় তাহলে রোযা না রাখা যায়েয আছে বরং না রাখা উত্তম। আর সফরে কষ্ট না হলে রোযা রাখাই হল মুস্তাহাব। তবে রোযা রেখে ভাঙ্গা ঠিক নয়। কেউ যদি ভেঙ্গে ফেলে তাহলে কাফ্ফারা আসবে কি না এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। যদিও গ্রহণযোগ্য মত হল যে, এই অবস্থায় কাফ্ফারা ওয়াজিব হয় না। (আহসানুল ফাতাওয়া ৪:৪৪)
মশা-মাছি-ধোঁয়া-ধূলাবালি
১) মাছি কণ্ঠনালীতে চলে গেলে রোযা ভাঙ্গবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৩)
২) রোযার কথা মনে থাকা সত্ত্বেও যদি মাছি কিংবা ধুলিবালি কিংবা ধোঁয়া কণ্ঠনালী দিয়ে ভিতরে চলে যায়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হয় না, চাই ধুলি আটার হোক, যা চাক্কি পেষণ কিংবা আটা মেশিনে নেয়ার সময় উড়ে থাকে, চাই ফসলের ধুলি হোক, চাই বাতাসে মাটি উড়ে আসুক, কিংবা পশুর খুর ও পা থেকে আসুক।
(আদ দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, খন্ড-০৩, পৃ-৩৬৬)
৩) অনুরূপভাবে, বাস কিংবা গাড়ির ধোঁয়া অথবা সেগুলোর কারণে ধুলি ওড়ে কণ্ঠনালীতে পৌঁছে, যদিও রোযাদার হবার কথা স্মরণ ছিলো, তবুও রোযা ভাঙ্গবে না।
৪) যদি এমন হয় যে, বাতি জ্বলছে, আর সেটার ধোঁয়া নাকে প্রবেশ করেছে, তবু রোযা ভাঙ্গবে না। হাঁ, যদি লোবান কিংবা আগর বাতি জ্বলতে থাকে আর রোযার কথা মনে থাকা সত্ত্বেও মুখ সেটার নিকটে নিয়ে গিয়ে নাক দ্বারা ধোঁয়া টানে, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।(রদ্দুল মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬৬)
৫) মশা-মাছি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটের ভেতর ঢুকে গেলেও রোযা ভাঙ্গবে না। অনুরূপ ধোঁয়া বা ধুলোবালি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা পেটের ভেতর ঢুকে গেলে রোযা ভাঙ্গবে না।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা: ৬/৩৪৯; রদ্দুল মুহতার: ২/৩৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৩)
নাক-কান-গলা-দাঁত সম্পর্কিত মাসায়েল
১) কানে পানি ঢুকে গেলে, রোযা ভঙ্গ হয় না, বরং খোদ্ পানি ঢাললেও রোযা ভাঙ্গবে না।
(আদ দুররুল মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬৭)
২) খড়কুটা দ্বারা কান চুলকালো, ফলে ওই খড়কুটার ময়লা লেগে গেলো, আর ওই খড়কুটাটি পুনরায় কানে দিলো। সে কয়েকবার এমন করলেও রোযা ভাঙ্গবে না।
(আদ দুররুল মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬৭)
৩) কানে তেল বা ওষুধ প্রবেশ করালে রোজা ভেঙে যাবে। এতে শুধু কাজা ওয়াজিব হবে। কাফফারা ওয়াজিব হবে না। তবে গোসল করার সময় যদি অনিচ্ছাবশত কানে পানি প্রবেশ করে, তাহলে রোজা ভাঙবে না। (রদ্দুল মুহতার: ২/৩৯৬)
৪) দাঁত কিংবা মুখে হালকা এমন কোন জিনিষ অজানাবশতঃ রয়ে গেলো, যা থুথুর সাথে নিজে নিজেই নিচে নেমে যায়। বাস্তবেও তা নেমে গেছে। তবুও রোযা ভাঙ্গবে না।
(আদ দুররুল মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬৭)
৫) দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে কণ্ঠনালী পর্যন্ত গেলে, কিন্তু কণ্ঠনালী অতিক্রম করে নিচে নামেনি। এমতাবস্থায় রোযা ভাঙ্গেনি।
(ফতহুল কদীর, খন্ড-২য়, পৃ-২৫৭)
৬) দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে যদি তা থুথুর সাথে ভেতরে চলে যায় তবে রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশি হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।-আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৬
ই'তিকাফ
১) রমযান মাসের শেষ দশ দিন ই'তিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়াহ। যদি কোনো মসজিদে এক জনও ই'তিকাফ এ বসে তাহলে এলাকাবাসী সুন্নত তরকের গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। আর যদি একজনও ই'তিকাফ না করে তাহলে ঐ এলাকার সকলেই গুনাহগার হবে।
২) রমযান মাসের শেষ দশকের ই'তিকাফ অবস্থায় সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নয়। বের হলে ই'তিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়ার কারণে তার সুন্নত ই'তিকাফ নষ্ট হয়ে গেছে। যেদিন গোসলের জন্য বের হয়েছে ঐ দিনের ই'তিকাফ কাযা করে নেওয়া জরুরি। আর এই ই'তিকাফটি নফল ই'তিকাফ হিসাবে গন্য হবে। (মারাকিল ফালাহ ৩৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২)
৩) ই'তিকাফ একটি ইবাদত, যা বিনিময়যোগ্য নয়। তাই ই'তিকাফ এর জন্য পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয নয়। কাউকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এতেকাফ করালে সে ই'তিকাফ সহীহ হবে না। অতএব এ জাতীয় ই'তিকাফ দ্বারা এলাকাবাসী দায়িত্বমুক্ত হতে পারবে না। (হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/৩০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; ইলাউস সুনান ১৬/১৭২-৭৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৫)
৪) ই'তিকাফরত ব্যক্তি পেশাব-পায়খানার জন্য মসজিদের বাইরে গেলে আসা যাওয়ার পথে পথ চলতে চলতে সালাম আদান-প্রদান করতে পারবে। তদ্রুপ এসময় পথ চলতে চলতে কারো সাথে অল্পস্বল্প কথাও বলতে পারবে। এতে ই'তিকাফ এর ক্ষতি হবে না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৭; মিরকাতুল মাফাতিহ ৪/৫২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১)
৫) বিনিময় নিয়ে ই'তিকাফ করা বা করানো সম্পূর্ণ নাজায়েয। কারণ ই'তিকাফ একটি ইবাদত। আর ইবাদতের বিনিময় দেওয়া-নেওয়া নাজায়েয। ঐ লোকের ই'তিকাফ দ্বারা সুন্নতে মুয়াক্কাদা (কেফায়া) এর দায়িত্ব আদায় হবে না। (জামে তিরমিযী ১/৫১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১১৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৪; মাবসূত,সারাখসী ১৬/৩৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩২৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৩৭)
৬) বুঝমান নাবালেগের ই'তিকাফ সহীহ। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্য থেকেই ই'তিকাফে বসা উচিত । কেননা রমযানের শেষ দশকের ই'তিকাফ অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। তাই এ ব্যাপারে উদাসীনতা মোটেই ভালো নয়। (বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭৭)
৭) পুরুষের ই'তিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য শরয়ী মসজিদ হওয়া জরুরি। নামায-ঘরে ই'তিকাফ সহীহ হবে না। তাই ই'তিকাফে বসতে চাইলে মসজিদেই বসতে হবে। খানা আনা-নেওয়ার জন্য কেউ না থাকলে ই'তিকাফ অবস্থায় খানা নেওয়ার জন্য বাড়ি যেতে পারবেন। তবে খানা নিয়ে দ্রুত মসজিদে ফিরে যেতে হবে। বাইরে বিলম্ব করা যাবে না।(সূরা বাকারা ১৮৭; সুনানে আবু দাউদ ৩৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪০)
৮) আযান দেওয়ার জন্য ই'তিকাফকারী মুয়াযযিনের কামরায় যাওয়া জায়েয। এ কারণে ইতিকাফ নষ্ট হবে না। (দেখুন : আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮০; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩)
সদকাতুল ফিতর
১) রোযা না রাখলে বা রাখতে না পারলে তার উপরও ফিতরা দেয়া ওয়াজিব। এ কথা নয় যে, রোযা না রাখলে ফিতরাও দিতে হয়না।(ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
২) সদকায়ে ফিতর নিজের পক্ষ থেকে এবং পিতা হলে নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকে দেয়া ওয়াজিব। বালেগ সন্তান, স্ত্রী, স্বামী, চাকর-চাকরাণী, মাতা-পিতা, প্রমুখের পক্ষ থেকে দেওয়া ওয়াজিব নয়। তবে যৌথ পরিবার হলে বালেগ সন্তান মাতা-পিতার পক্ষ থেকে স্ত্রীর পক্ষ থেকে ফিতরা দেয়া মুস্তাহাব। ( ফাতওয়ায়ে তাতার খানিয়া)
৩) সদকায়ে ফিতর যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা আদায় করলে প্রত্যেক ফিতরার জন্য ৩ কেজি ২৬৫.৯২ গ্রাম বা তার মূল্য দান করবে। আর গম বা আটা দ্বারা দিলে পৌনে দুই সের = ১৬৩২.৯৬ গ্রাম বা তার মূল্য দান করলেই ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
৪) সদকায়ে ফিতর যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা আদায় করলে প্রত্যেক ফিতরার জন্য ৩ কেজি ২৬৫.৯২ গ্রাম বা তার মূল্য দান করবে। আর গম বা আটা দ্বারা দিলে পৌনে দুই সের = ১৬৩২.৯৬ গ্রাম বা তার মূল্য দান করলেই ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
৫) দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে যদি তা থুথুর সাথে ভেতরে চলে যায় তবে রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশি হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৬)
যাকাত
১) কোন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নর-নারীর কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঋণ মুক্ত সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা তার সমমূল্যের ব্যবসায়ী সম্পদ বা টাকা পয়সা থাকবে সে নেসাব পরিমান মালের মালিক হিসেবে গণ্য হবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
২) সম্পদের ৪০ ভাগের একভাগ যাকাত হিসেবে দিতে হবে। অর্থাৎ- শতকরা ২.৫০ টাকা যাকাত দিতে হবে। (হেদায়া)
৩) যদি কারো নিকট কিছু সোনা থাকে এবং তার সাথে কিছু রুপা বা কিছু টাকা-পয়সা বা কিছু ব্যবসায়িক পণ্য থাকে তাহলে এ ক্ষেত্রে সোনার সাড়ে সাত তোলা বা রুপার সাড়ে বায়ান্ন তোলা দেখা হবে না বরং সোনা, রুপা এবং টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য যা কিছু আছে সবটা মিলে যদি সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্না তোলা রুপার যে কোন একটার মূলের সমপরিামণ হয়ে যায়, তাহলে (বৎসরান্তে) তার উপর যাকাত ফরয হবে। ( ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
৪) স্বর্ণ-রুপা নিজের মালিকানায় থাকলেই তার যাকাত দিতে হবে। চাই তা অলংকার হিসেবে ব্যবহার হোক বা না হোক। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
৫) আপন ভাই-বোনকে (গরিব হলে) যাকাতের টাকা দেয়া যাবে। বরং দেয়াটাই উত্তম। ( ফাতওয়ায়ে শামী)
৬) যাকাত দাতার মা, বাবা, দাদা, দাদী, পরদাদা, পরদাদী, পরনানা, পরনানী ইত্যাদি উপরের সিঁড়ির পুরুষদেরকে যাকাত দেয়া যাবে না। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
৭) যাকাত দাতার স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে যাকাতের টাকা দিতে পারবে না। ( রদ্দুল মুহতার)
৮) মসজিদ, মাদরাসা বা স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল প্রভৃতি নির্মাণ কাজের জন্য যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না। (রদ্দুল মুহতার)
ফিদইয়া
১) এক রোযার পরিবর্তে এক ফিদয়া ফরয হয়। এক ফিদয়া হল, কোনো মিসকীনকে দু বেলা পেট ভরে খানা খাওয়ানো অথবা এর মূল্য প্রদান করা। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক: হাদীস- ৭৫৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী: ৩/৩৬৯; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪২৬)
২) যাদের জন্য রোযার পরিবর্তে ফিদইয়া দেওয়ার অনুমতি রয়েছে তারা রমযানের শুরুতেই পুরো মাসের ফিদয়া দিয়ে দিতে পারবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪২৭; আলবাহরুর রায়েক: ২/২৮৭)
৩) ছুটে যাওয়া রোযার কাযা সম্ভব না হলে মৃত্যুর পূর্বে ফিদয়া দেওয়ার অসিয়ত করে যাওয়া জরুরি। অসিয়ত না করে গেলে ওয়ারিশরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে ফিদয়া দেয় তবে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করবেন। তবে মৃত ব্যক্তি অসিয়ত না করে গেলে সেক্ষেত্রে মিরাসের ইজমালী সম্পদ থেকে ফিদয়া দেওয়া হবে না। একান্ত দিতে চাইলে বালেগ ওয়ারিশগণ তাদের অংশ থেকে দিতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার: ২/৪২৪-৪২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৭)
কাফফারা
৪) রোযার কাফফারা হলো-
ক. একজন দাম আযাদ করা। অথবা,
খ. বিরতিহীন ষাটটি রোযা রাখা। অথবা,
গ. ষাটজন মিসকিনকে মধ্যমপন্থায় খাওয়ানো। (বুখারি-১৭৯৮)
কাফফারার মাসআলাসমূহ:
মাসআলাঃ রোযার কাফফারা হল, একটি রোযার জন্য (একটি কাযা রোযা ব্যতীত)টানা ২ মাস রোযা রাখতে হবে।
মাসআলাঃ কাফফারা যদি চান্দ্র মাসের পহেলা তারিখে শুরু করে তবে দুমাস রোযা রাখলেই হবে । আর যদি মাসের মাঝখান থেকে শুরু করে তবে ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা পূর্ন করতে হবে ।
মাসআলাঃ এই ৬০ দিন রোযা রাখতে গিয়ে যদি কোন কারনে ধারাবাহিকতা ছুটে যায় তবে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে ।
মাসআলাঃ কাফফারার রোযা আদায় করতে গিয়ে যদি মধ্যখানে দুই ঈদের কোনদিন এসে পড়ে তবে পূনরায় নতুন করে শুরু করতে হবে।
মাসআলাঃ হায়েযের কারনে মহিলাদের যে দিনগুলো বিরতী যাবে তাতে কোন সমস্যা নেই । কিন্ত নেফাসের কারনে বিরতী পড়লে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
মাসআলাঃ পুরো এক রমজানে একটি কাফফারাই ওয়াজিব হবে,চাই যত গুলো রোযা ইচ্ছাকৃত ভাঙ্গা হোক না কেন । ভিন্ন বছরের রমজানের কারনে ভিন্ন কাফফারা ওয়াজিব হবে।
মাসআলাঃ কাফফারার রোযার নিয়ত সুবহে সাদিকের পূর্বে করা জরুরী।
মাসআলাঃ যদি কেউ ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোযা রাখতে সমর্থ না হয় তবে সে ৬০ জন মিসকীনকে দুবেলা পেট ভরে খাওয়াবে । অথবা তাদের প্রত্যেককে একটি ফেতরা পরিমান (১৬৬২ গ্রাম) গম বা আটা কিংবা তার মুল্য দিয়ে দিবে।
মাসআলাঃ একজন মিসকীনকে ৬০দিন দুবেলা পেট ভরে খাওয়ালে অথবা ৬০ দিনের প্রতিদিন একটি করে ফেতরা আদায় করলেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে । তবে একজনকে ৬০ দিনেরটা এক দিনেই দিয়ে দিলে এক দিনের কাফফারা আদায় হবে। অবশ্য খানা খাওয়ানোর ক্ষেত্রে মাঝে দু-একদিন বিরতী পড়লে কোন সমস্যা নেই।
যাদের জন্য রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে:
০১.মুসাফিরের জন্য শরঈ সফররত অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে । তবে কষ্ট না হলে রোযা রাখাই উত্তম। না রাখলে পরে কাযা করে নিবে।
০২. হায়েয নেফাস অবস্থায় মাহিলারা রোযা ছেড়ে দিবে । এমতাবস্থায় রোযা রাখা জায়েয নেই। পরে কাযা করে নিবে।
০৩.যদি রোযা রাখার কারনে রোগীর রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা হয় অথবা সুস্থতা বিলম্বিত হয় তবে দ্বীনদার বিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোযা ভাঙ্গা বা না রাখা জায়েয আছে। পরে কাযা করে নিবে।
০৪. গর্ভবতী বা দুগ্ধ দানকারিনী মহিলা রোযা রাখলে যদি তার বা সন্তানের প্রানহানী বা সাস্থ্যহানীর প্রবল আশংকা হয় তবে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা বা না রাখা জায়েয।
০৫.কেউ যদি কাউকে রোযা ভাঙ্গার হুমকি দেয় যে, সে রোযা রাখলে তাকে হত্যা করবে বা মারাত্মক কোন ক্ষতি করবে তবে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা জায়েয।পরে কাযা করে নিবে।
০৬. শারীবিক দূর্বলতার কারনে যদি রোযা রাখলে নতুনভাবে কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশংকা হয় তবে রোযা না রাখার অনুমতি আছে। পরে কাযা করে নিবে।
উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে বাহানা তালাশ করে রোযা ছেড়ে দেওয়া অনেক বড় গুনাহের কাজ ও জঘন্যতম অপরাধ। মনে রাখতে হবে আল্লাহ তাআলা অন্তরের খবর সম্পর্কে সম্যক অবগত।
০৭. বার্ধক্যজনিত কারনে কেউ রোযা রাখতে সক্ষম না হলে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে।
এক্ষেত্রে সে রোযার ফিদয়া আদায় করবে । অনরুপ ভাবে রোযা রাখতে অক্ষম এমন রোগাক্রান্ত ব্যক্তির যদি ভবিষ্যতে রোগমুক্তির আশা না থাকে সেও ফিদয়া আদায় করবে।
ফিদয়া সংক্রান্ত মাসায়েল:
মাসআলাঃ ফিদয়া হল প্রতিটি রোযার পরিবর্তে ১জন মিসকীনকে দুবেল পেট ভরে খানা খাওয়ানো অথবা ছদকায়ে ফিতর(১৬৬২ গ্রাম) পরিমান গম বা আটা কিংবা তার মুল্য ছদকা করে দেওয়া।
মাসআলাঃ রোযার ফিদয়া কেবল দুধরনের লোক দিতে পারবে। ১। অতিশয় বৃদ্ধ যার রোযা রাখার সামর্থ নেই। ২। রোযা রাখাতে অপারগ এমন রোগী যার ভবিষ্যতে সুস্থ হওয়ার কোন আশা নেই। কাজেই এই দুধরনের লোক ব্যতীত যারা সাময়ীক কারনে আপাতত রোযা রাখতে পারছেন না তারা ফিদয়া দিতে পারবেন না বরং পরবর্তিতে কাযা করে নিবে।
মাসআলাঃ কেউ যদি তার জিম্মায় থাকা কাযা রোযা আদায় করতে না পারে তবে তার জন্য মৃত্যুর পূর্বে ফিদয়ার ওছিয়ত করে যাওয়া জরুরী। ওছিয়ত করে গেলে তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা আদায় করা হবে।
মাসআলাঃ যদি উক্ত ব্যক্তি ওছিয়ত না করে থাকে তবে এজমালী সম্পদ থেকে ওছিয়ত আদায় করা যাবে না। তবেঁ যদি সকল ওয়ারিশগন সতঃস্ফূর্ত অনুমতি দিয়ে দেয় তবে সেক্ষেত্রে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিবেন।
উল্লেখ্য যে, ওয়ারিশগনের মধ্যে কোন নাবালেগ থাকলে তার অনুমতি সাপেক্ষেও তার সম্পদ থেকে ফিদয়া আদায় করা যাবে না।
মাসআলা: ওযরের কারনে যারা রোযা রাখতে পারেনি তারা যদি উক্ত ওযর অবস্থায় মারা যায় তবে তাদের জন্য কাযা বা ফিদয়ার ওছিয়ত কোনটিই জরুরী নয়। ওযর দূরীভূত হয়ে যাওয়ার পর যদি সময় পাওয়া সত্তেও কাযা না করে তবে যে কয়দিন সে সময় পেয়েছে সেই দিনগুলোর ফিদয়ার ওছিয়ত করে যাওয়া জরুরি।
মাসআলাঃ একটি রোযার পরিবর্তে একটি ফিদয়া দিতে হয়। রমযান শুরু হলে পুরো মাসের ফিদয়া একত্রে দেওয়া যায় ।
মাসআলাঃ যাদের জন্য ফিদয়া দেওয়ার অনুমতি রয়েছে তারা যদি ভবিষ্যতে কখনও রোযা রাখতে সমর্থ হয়ে যায় তবে তাদের ছুটে যাওয়া রোযা কাযা করতে হবে। যদিও তারা ফিদয়া আদায় করে থাকে । অবশ্য সে ফিদয়ার জন্য ছদকার ছাওয়াব পাবে।
মাসআলাঃ একটি ফিদয়া একজনকে দেওয়া উওম, তবে একাধিক ব্যক্তিকেও দেওয়া য়ায়। অনুরুপভাবে একাধিক ফিদয়াও একজনকে দেওয়া যায়।
মাসআলাঃ নাবালেগকে ফিদয়া দিলে বা খাওয়ালে তা আদায় হবে না।
রমযানে সফর সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি মাসআলা:
মাসআলাঃ মুসাফিরের জন্য সফররত অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে যদি রোযা রেখে ফেলে তাহলে তা ভাঙ্গা জায়েয নয়। ভেঙ্গে ফেললে গুনাহ হবে। তবে এক্ষেত্রে তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে।
মাসআলাঃ কেউ যদি রোযা রাখার পর সফর শুরু করে তবে তার জন্যও রোযা ভাঙ্গা জায়েয নেই। ভেঙ্গে ফেললে গুনাহগার হবে। অবশ্য এক্ষেত্রেও তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।
উল্লেখিত মাসআলা দুটি খুব ভালভাবে বুঝে নেওয়া দরকার। অনেকেই মনে করে সফররত অবস্থায় মুতলাক্বভাবে (সর্ববস্থায়)রোযা ভেঙ্গে দেওয়া যায়। বরং শরঈ সফররত অবস্থায় যদি সুবহে সাদিক এসে যায় তবে সেই কেবল রোযা না রাখতে পারে । তবে যদি রোযা রাখার পর সফর করে অথবা সফর শুরু করার পর রোযা রেখে ফেলে তাহলে তা আর ভাঙ্গা জায়েয হবে না।
মাসআলাঃ মুসাফির যদি সূর্য উঠার আগে মুকীম হয়ে যায় আর তার থেকে রোযা ভঙ্গ হওয়ার কোন কারন প্রকাশ না পায় তবে তার জন্য রোযার নিয়ত করা জরুরী । অন্যথায় সে গুনাহগার হবে।তবে রোযা না রাখলে তার জন্য শুধু কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।
বিবিধ মাসআলা:
মাসআলাঃ রমজান মাসের দিনের বেলায় যদি কোন মহিলা হায়েয বা নেফাস থেকে পাক হয় অথবা নাবালেগ বালেগ হয় অথবা মুসাফির মুকীম হয় অথবা কোন কারনে কারো রোযা ভেঙ্গে যায় তবে সকলকে রমযানের সম্মান রক্ষার জন্য দিনের বাকি অংশ পানাহার থেকে বিরতি থাকতে হবে। যদিও তাদেরকে উক্ত দিনের রোযা পরবর্তিতে কাযা করে নিতে হবে।
মাসআলাঃ যদি এমন পিপাসা বা ক্ষুধা লাগে যে, প্রাণের আশংকা হয় তবে তার জন্য রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয।
মাসআলাঃ কাযা রোযার জন্য সুবহে সাদিকের পূর্বেই নিয়ত করা জরুরী। অন্যথায় রোযা সহীহ হবে না। নফল রোযার নিয়ত সুর্য ঢলার পূর্ব পর্যন্ত করা যায়।
মাসআলাঃ বছরে ৫ দিন রোযা রাখা হারাম। দুই ঈদের দিন এবং ক্বোরবানীর ঈদ পরবর্তি ৩ দিন।
১) রোজা কার উপরে ফরজ?
প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়ষ্ক, মুকীম মুসলমান নর-নারীর উপর রমযানের রোযা রাখা ফরজ। তবে মহিলাদের জন্য শর্ত হল তাদের হায়েয –নেফাস থেকে পবিত্র হতে হবে। কাজেই পাগল,মুসাফির,নাবালেগ ও হায়েজ- নেফাস ওয়ালী মহিলার উপর রোজা ফরজ নয়।
২) স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভাঙ্গবে না। (সুনানে কুবরা, বাইহাকী: ৪/২৬৪)
৩) চোখের দু’ এক ফোটা পানি মুখে চলে গেলে রোযার ক্ষতি হয় না। তবে তা যদি গলার ভেতর চলে যায় তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আলমুহীতুল বুরহানী: ৩/৩৪৯; ফাতাওয়া হিনিদয়া: ১/২০৩)
৪) মিসওয়াক করলে রোযা ভাঙ্গে না, মাকরুহও হয় না। (বুখারি-১৭৯৬)
৫) রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট, টুথপাউডার, মাজন বা কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা মাকরুহ। রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। কোনো ব্যক্তি যদি হাঁপানি অথবা অ্যাজমার কারণে ইনহেলার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়, তাহলে রোজা ভাঙার অনুমতি আছে। তবে ওই রোজা পরে কাজা করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ২/৩৯৫)
৬) কোনো কারণে রোজা ভেঙে গেলেও দিনের বেলায় পানাহার করা যাবে না। সারা দিন রোজাদারের মতো থাকা ওয়াজিব। (হিদায়া: ১/১৮৫)
৭) রমযান মাসে কেউ যদি পাগল হয়ে যায় তাহলে তার রোযা মাফ হয়ে যায়। তবে পুরো মাসের কোন অংশে সুস্থ হলে পূর্বের রোযাগুলোর কাযা করতে হবে। (আল বাহরুর রায়েক: ২/৫০৭)
৮) নাবালেগ ছেলে-সন্তানদেরকে রোযা রাখার হুকুম করতে হবে, যদি তারা এর শক্তি রাখে এবং এর দ্বারা তাদের কোন ক্ষতি না হয়। আর দশ বৎসর বয়সে রোযা রাখতে শুরু না করলে প্রয়োজনে প্রহার করা যাবে।(দুররে মুখতার: ২/৪০৯)
মন্দ কাজ সম্পর্কিত মাসায়েল
১) কেউ যেন রোজা রাখা অবস্থায় কোন খারাপ কর্ম না করে। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে আসে বা গালি দেয় তাহলে সে যেন বলে আমি রোজাদার। (বুখারি : ১৮৯৪)
২) হস্তমৈথুন করলে রোযা ভেঙ্গে যায় এবং তার কাযা আদায় করা জরুরী। এটা জঘন্য পাপকার্য। হাদিসে এইরুপ ব্যক্তির উপর লানত করা হয়েছে। (দুররে মুখতার: ২/৩৯৯)
৩) বিড়ি-সিগারেট, হুক্কা পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। (রদ্দুল মুহতার ৩/৩৮৫)
৪) গীবত করলে রোযা ভাঙ্গবে না।
(আদ দুররুল মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬২)
যদিও গীবত জঘন্য কবীরা গুনাহ্। ★কুরআন মজীদে গীবত সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তা মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার মতোই।’ আর হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে, ‘গীবত যেনা থেকেও জঘন্যতর।’
(আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৩১, হাদীস নং-২৬)
অবশ্য, গীবতের কারণে রোযার নূরানিয়্যাত শেষ হয়ে যায়।
(বাহারে শরীয়ত, খন্ড-৫ম, পৃ-৬১১)
৫) রোযা অবস্থায় অযথা কথাবার্তা বলা কিংবা অশ্লীল কথা বলা মারাত্মক গুনাহের কাজ। (সহিহ ইবনে খুযাইমা-১৯৯৪)
সালাত সম্পর্কিত মাসায়েল
১) বিতরের নামাযে ভুলে দোআয়ে কুনুত না পড়ে রুকুতে চলে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। তাই নামায শেষে সিজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে। (আল বাহরুর রায়েক)
২) এভাবে মোবাইল নামাযে বন্ধ করলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। তবে যদি না দেখে শুধু হাত দ্বারা আন্দাজ করে বন্ধ করে তহলে নামায নষ্ট হবে না। ( মাসায়েলে মোবাইল)
৩) ২০ রাকাত তারাবীহ নামায পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্য সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। তবে পুরুষদের জন্য তারাবীর জামাত করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহে কিফায়া। মেয়েরা জামাআত ছাড়াই নিজেরা পড়ে নিবে। ( আহসানুল ফাতওয়া)
৪) এ অবস্থায় জামাতের সাথে ইমামের পিছনে বিতর নামায আদায় করার পর ছুটে যাওয়া তারাবীহ নামাযের রাকাআতগুলো আদায় করতে হবে। ( ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
৫) সিজদার ফরজ হচ্ছেঃ
- কমপক্ষে পায়ের এক আঙ্গুল এর পেট যমীনের লাগানো থাকবে এবং
- প্রতিটি পায়ের বেশির ভাগ আঙ্গুলের পেট যমীনের উপর স্থির থাকা ওয়াজিব।
- অনুরূপভাবে নাকের হাড় যমীনের উপর লাগানো ওয়াজিব। অনেক লোকের নাক যমীনের সাথে লাগেই না আর লাগলেও নাকের অগ্রভাগ লাগে মাত্র। এখানে ওয়াজিব বর্জন করা গুনাহ আর এতে অভ্যস্ত হওয়া ফাসেক্বী।
- পাগুলো দেখুন আঙ্গুলের মাথা জমিনের উপর থাকে বটে কিন্তু কোন আঙ্গুলের পেট বিছানো অবস্থায় থাকে না। এমতাবস্থায় সেজদা বাতিল। নামাজও নিষ্ফল।
অথচ মুসল্লী সাহেব নামাজ পড়ে বাসায় চলে গেলেন। (ফতোয়ায়ে রেজভীয়া, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা 555, ইরশাদে আ'লা হযরত)
...........................................................
- দৈনন্দিন জীবনের প্রশ্নোত্তর ও মাসায়েল (১)
- কসর কখন করবে এবং মুসাফির কসর না পড়ে পূর্ণ নামায আদায় করতে পারবে কিনা?
- মুসাফির কসর না করে ভুলে চার রাকাতই পড়ে ফেললে কী করণীয়?
- ঢাকা শহরের সফরের সীমানা কোনখান থেকে ধর্তব্য হবে?
- শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে নারীরা মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারবে কিনা?
- এক সফরে একাধিক ওমরাহ করা।
- দেশ-বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
- ডেলিভারির জন্য অমুসলিম মহিলা ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে কিনা?
- ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর চাকরি
- মহিলারা সবখানে যেতে পারলে মসজিদে যেতে পারবে না কেন?
- পুত্রবধূ শশুরের সাথে সফরে যেতে পারবে কিনা?
- ক্বারীন জ্বীন: আপনার নিত্যসঙ্গী এ ভয়ানক শয়তান সম্পর্কে আপনি কতটা সচেতন?
- প্রশ্নঃ সন্ধ্যার সময় ঘরের দরজা খোলা না কি বন্ধ রাখা উচিৎ?
- প্রশ্নঃ রেডিওতে ”যাহা বলিবো সত্য বলিবো” প্রগ্রামে কোন লোকের খারাপ কাজ সতর্কতার জন্য সকলকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো কি জায়েজ?
- প্রশ্নঃ মেয়েদের হাতে/পায়ে আলতা দেয়া কি হারাম? নামাজ পড়লে কি হবে?
- প্রশ্নঃ প্রিয় নবীর পিতা-মাতা কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন?
- দৈনন্দিন জীবনের প্রশ্নোত্তর ও মাসায়েল (২)
- দৈনন্দিন জীবনের প্রশ্নোত্তর ও মাসায়েল (৩)