২৬৫২। আবূত-তাহির (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসের শেয দশকে ইতিকাফ করতেন। নাফি (রহঃ) বলেন, মসজিদের যে স্থানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করতেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) তা আমাকে দেখিয়েছেন।
ইতিকাফ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদত। ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আক্ষরিক অর্থেই বাহ্যত আল্লাহর সন্নিধানে চলে যায়। রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগে থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমজান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ কিফায়াহ। কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবেন। আর কেউই আদায় না করলে সবাই দায়ী থাকবেন। তবে আদায়ের ক্ষেত্রে যিনি বা যাঁরা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তাঁরাই সওয়াবের অধিকারী হবেন।
‘ইতিকাফ অবস্থায় যা করণীয়:-
১. অধিক পরিমাণে নফল নামাজ আদায় করা, ২. পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করা, ৩. জিকির আজকার করা, ৪. দোয়া করা, ৫. ইস্তেগফার ও হাদিসে বর্ণিত সকাল-সন্ধ্যার দোয়াগুলো পাঠ করা। ৬. বিশেষ করে কদরের রাত্রিগুলোতে অর্থাৎ বিজোড় রাত্রিগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সব ধরনের নফল আমল করার চেষ্টা করা।
ইতিকাফ অবস্থায় যা বর্জণীয়:-
১.চুপচাপ বসে থাকা, ২. গীবত বা পরনিন্দা না করা। ৩.জিনিসপত্র মসজিদে এনে বেচাকেনা করা, ৪.ঝগড়া করা, ৫. অনর্থক কথাবার্তা বলা, ৬. অপ্রয়োজনীয় গল্প জুড়ে দেওয়া।
ইতিকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বৈধ:-
১.মসজিদে আহার করা, ২. পেশাব-পায়খানার জন্য বাহিরে যাওয়া, ৩. আজান দেওয়া জন্য বাহিরে যাওয়া ৪.গোসলের জন্য বাহিরে যাওয়া, ৫. জুমার নামাজের জন্য এতটুকু সময় নিয়ে বের হওয়া যাতে নিকটবর্তী জামে মসজিদে গিয়ে খুতবার পূর্বে ২/৪ রাকাত সুন্নাত আদায় করা যায় ।
যেসব কারণে ইতেকাফ ভেঙে যায়:-
১.ওজর বশত বের হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলম্ব করা, ২. বিনা কারণে মসজিদের বাহিরে যাওয়া, ৩. স্ত্রী সহবাস করা, ৪. ভয়ের কারণে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া।
বান্দার নিকট লাইলাতুল কদর প্রাপ্তি ও এ রাতের ঘোষিত ফজিলত লাভে ইতেকাফের চেয়ে উত্তম কোনো আমল নেই। তাই এই সুযোগকে মূল্যায়ন করে যথাযথ কল্যাণ লাভের চেষ্টা করা উচিত।
লেখক: শিক্ষার্থী, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
ইতিকাফ ইমানদারের এক গুরুত্বপূর্ণ আমল
রমজানে একটি ফরজ—এক মাস রোজা রাখা; দুটি ওয়াজিব—সদকাতুল ফিতর দেওয়া ও ঈদের নামাজ আদায় করা; পাঁচটি সুন্নত—সাহ্রি খাওয়া, ইফতার করা, তারাবিহ পড়া, কোরআন করিম তিলাওয়াত করা ও ইতিকাফ করা।
হজরত উম্মে ছালামাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনটি আমল কখনো পরিত্যাগ করেননি—তাহাজ্জুদ নামাজ, প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’-এর রোজা পালন ও রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা। (জামিউস সগির ও সহিহ বুখারি: ১৯৭৫)
হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) আজীবন রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করেছেন। তাঁর ওফাতের (আগে) পরেও তাঁর বিবিরা (ঘরে) ইতিকাফ করতেন। (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৪৬, পৃষ্ঠা: ১২৯)