প্রশ্নোত্তর

 

রমজান /রোজা বিষয়কঃ

  • প্রশ্নোত্তরে রমাদান :
প্রশ্নঃ রোজা রেখে রক্ত কি দেওয়া যাবে?

উত্তরঃ
আমাদের অনেকে মধ্যে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে রোজা রেখে রক্ত দিলে নাকি রোজা ভেঙে যায়। এটা আসলে কুসংস্কার।

★ হাদীস শরীফ মোতাবেক শরীয়তের সাধারণ উসুল হলো “শরীরের ভিতর থেকে কোন কিছু বের হলে ওযূ ভঙ্গ হয় এবং বাইর থেকে কোন কিছু শরীরের ভিতরে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়।”
★ রোজার ব্যাপারে ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি–এর যে উসুল, অর্থাৎ “বাইরে থেকে রোজাবস্থায় যে কোন প্রকারে বা পদ্ধতিতে শরীরের ভিতর কিছু প্রবেশ করলে, যদি তা পাকস্থলী অথবা মগজে প্রবেশ করে, তবে অবশ্যই রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।”


শারীরিকভাবে সমর্থ হলে রোজা রেখে রক্ত দিতে কোনো অসুবিধা নেই।
রক্ত দিলে রক্ত বের করা হয় তা সেলাইন বা সিরিঞ্জ এর মাধ্যমে ।
প্রশ্ন হল  রক্ত বের  হলে/করলে রোজা ভাঙবে কিনা?
এই জবাবে যুক্তি দেয়া যায় রোজা রাখা অবস্থায় শিংগা লিগিয়ে দু:ষিত রক্ত বের করে চিকিৎসা সম্পর্কিত হাদিস সমুহ :-
★ জামে তিরমিজী এর ৮/ সাওম (রোজা) অধ্যায় হতে হাদিসের মানঃ - ৭৭৩ বিশর ইবনুূু হিলাল আল-বাসরী (রহঃ) ইবনুূু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম এবং সিয়াম অবস্থায়ও শিংগা লাগিয়েছেন। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি সহীহ।
★ জামে তিরমিজী এর ৮/ সাওম (রোজা) অধ্যায় হতে হাদিসের মানঃ - ৭৭৪ আবূ মূসা মুহাম্মদ ইবনুূু মূসান্না (রহঃ) ইবনুূু আব্বাস (র:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম অবস্থায় শিংগা লাগিয়েছেন। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, এই সনদে হাদীসটি হাসান-গারীব।
★ জামে তিরমিজী এর ৮/ সাওম (রোজা) অধ্যায় হতে হাদিসের মানঃ - ৭৭৫ আহমাদ ইবনুূু মানী (রহঃ) ইবনুূু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা ও মদীনার মাঝে ইহরাম এবং সিয়াম অবস্থায় শিংগা লাগিয়েছেন। এই বিষয়ে আবূ সাঈদ, জাবির ও আনাস (রাঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।
★ ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, ইবনুূু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি হাসান-সহীহ। কতক সাহাবী ও আলিম এই হাদীস অনুসারে অভিমত গ্রহণ করেছেন। তাঁরা সাওম পালনকারীর জন্য শিংগা লাগানোতে কোন দোষ আছে বলে মনে করেন না। এ হল ইমাম সুফিয়ান সাওরী, মালিক ইবনুূু আনাস ও শাফেঈ (রহঃ) এর অভিমত।
★ আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা, যূহায়র ইবনুূু হারব ও ইসহাক ইবনুূু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনুূু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্হায় শিংগা লাগিয়ে ছিলেন।
(মুসলিম ২৭৫৬)

★ আবূ বকর ইবনুূু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনুূু বুহায়না (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্হায় মক্কায় যাওয়ার পথে নিজের মাথার মধ্যস্হলে শিংগা লাগিয়েছিলেন।
(মুসলিম ২৭৫৭)

★ হযরত আকরামা (রা) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘নবী করিম (স) হজের জন্যে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় শরীর থেকে শিংগার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন এবং রোজা অবস্থায়ও শরীর থেকে শিংগার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন।’
★ হযরত সাবিত আল বানানী থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘হযরত আনাস বিন মালেক (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, রোজাদারের জন্যে শিংগা লাগিয়ে শরীর থেকে রক্ত বের করাকে আপনি কি অপছন্দ করেন? জবাবে তিনি বলেন, না আমি অপছন্দ করি না। তবে দুর্বল হয়ে পড়ার ভয় থাকলে ভিন্ন কথা।’ 
(সহীহ আল বোখারী ১:২৬০)

★ একইভাবে শিংগা লাগানোও অপছন্দ নয়। অর্থাৎ দুর্বল হয়ে পড়ার ভয় না থাকলে রোজা অবস্থায়ও শিংগা লাগিয়ে রক্ত বের করা যায়। 
[শামী কিতাব ২:৩৯৯]

★ রোজা অবস্থায় তেল ও সুগন্ধী ব্যবহার করলে রোজা ভাঙেনা। একইভাবে শিংগা লাগালেও রোজার ক্ষতি হয় না।
[হেদায়া কিতাব ১:২১৭]

এটাও জেনে রাখা ভাল -
★★★ শিংগা কি? শিংগা লাগালে কি গোসল করতে হয়?
জবাবঃ
★ শিংগা হলো গরু বা মহিষের শিং দিয়ে তৈরি বিশেষ এক রকম নল যা দিয়ে মানবদেহের দুষিত রক্ত, পুঁজ বের করা হতো দেহকে ব্যথামুক্ত করার জন্য।
জবাব : জ্বি হ্যা।
★ সুনানে আবু দাউদ এর ১/ পবিত্রতা অধ্যায় হতে হাদিসের মানঃ - ৩৪৮। উছমান ইবনুূু আবূ শায়বা আবদুল্লাহ্ ইব্নুয-যুবায়ের (রাঃ) থেকে আয়িশা (রাঃ) -র সূরে বর্ণিত। তিনি (আয়শা) তাকে ইবনুূু যুবায়ের) বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি কাজের জন্য গোসল করতেন- স্ত্রী সহবাসের পর, জুমুআর দিন, শিংগা লাগানোর পর এবং মৃত ব্যক্তির গোসল দেওয়ার পর (তা ছাড়াও তিনি ইহ্রাম, কা’বায় প্রবেশের পূর্বে ও অন্যন্য কাজের জন্যও গোসল করতেন।)
তাই মুমুর্ষ রোগীকে রক্ত দেয়া পুন্যের কাজ যদি নিজের ক্ষতি না হয় শক্তিশালী হয় তবে পারবে।
কারন রক্ত দিলে পানি পিপাসা পায়। অনেকে মাথা ঘুরে পরেও যায়। তখন কাযা করলে সেটা ১টা রোজা পরে রাখতে হবে। আর যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে ভাংগে তবে ৬০টা রোজা একাধারে রাখতে হবে ১টা মধ্যে ভেংগে গেলে পুনরায় ১ থেকে ৬০ টা রাখতে হবে।
আল্লাহ ভাল জানেন।


 প্রশ্নঃ রোজা অবস্থায় হস্তমৈথুন করলে শরীয়তের বিধান কি?

জবাবঃ
রোজা রেখে হস্তমৈথুন করলে রোজা কাজা দিতে হবে কাফফারা লাগবে না!(ফতওয়ায়ে শামী)

▪ প্রশ্নঃ হজ্ব করার পর পূর্বের মত গান-বাজনা, টিভি-সিনেমা দেখা কতটুকু বৈধ?

🖋উত্তর ঃ একজন হাজী হজ্জের পর নবজাত শিশুর মত নিস্পাপ হয়ে যায়। হজ্জের পর পুনরায় গুনাহর কাজে লিপ্ত হলে পুনরায় তার আমলনামায় ওই গুনাহ লিখা হয়। তাই হজ্জের পর বা পূর্বে সর্বাবস্থায় অশ্লীল গান-বাজনা শ্রবন করা এবং অশ্লীল সিনেমা-নাটক ইত্যাদি দেখা নাজায়েয ও গুনাহ। তদুপরি হজ্জের মাধ্যমে বান্দা ভবিষ্যতে জেনে-বুঝে গুনাহ না করার অঙ্গীকার করে থাকে। তাই হজ্জের পর জেনে-শুনে গুনাহে লিপ্ত হওয়া আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গের নামান্তর। যা মারাত্মক অপরাধ এবং পূর্বের চেয়ে আরাে বড় গুনাহ। তদুপরি হজ্জ করে আসার পর এ জাতীয় অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা পূর্ণ গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া হজ্জ কবুল না হওয়ারই ইঙ্গিত বহন করে।
[আশিয়াতুল লুম‘আত কৃত শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং
মেরকাত শরহে মিশকাত কৃত মােল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি।]

▪ প্রশ্নঃ ঋণগ্রস্ত ও মুসাফির ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান করা যাবে কি?

🖋উত্তরঃ মুসাফির যার কাছে খরচের টাকা নেই, সফরের মধ্যে আর্থিক সমস্যায় নিমজ্জিত খরচের টাকার জন্য অপরের মুখাপেক্ষী, যদিও নিজ ঘরে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে এ রকম ব্যক্তির জন্য প্রয়ােজন মােতাবেক যাকাত গ্রহণ করা শরীয়ত
অনুযায়ী বৈধ, প্রয়ােজনের চেয়ে বেশি নেওয়া কোরআন-সুন্নাহসম্মত নয়।
-(আলমগীরী ও দুররুল মুখতার)

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ঋণের বােঝা থেকে পরিত্রাণের জন্যে যাকাত গ্রহণ করা বৈধ। কিন্তু যদি তার নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে এবং ঐ সম্পদ দ্বারা ঋণ পরিশােধ হয়ে যায়, তবে উক্ত ব্যক্তির জন্য ঋণ পরিশােধের জন্য যাকাত নেওয়া বৈধ হবে না। আর ঋণের পরিমাণ যদি নিসাবের পরিমাণ থেকে বেশি হয়, তখন নিসাব পরিমাণের চেয়ে বর্ধিত পরিমাণ ঋণ পরিশােধের জন্য যাকাত গ্রহণ করা বৈধ।
-(ফতােয়ায়ে হিন্দিয়া যাকাত অধ্যায় ইত্যাদি)।

 প্রশ্নঃ সাদী, সত্য, সৎসন্তানকে যাকাত প্রদান করা যাবে কিনা?

🖋উত্তর ঃ সাদী, সম্মা এবং সৎসন্তানকে যাকাত প্রদান করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। কেননা উক্ত ব্যক্তিবর্গ যাকাত প্রদানকারীর মূলও নন এবং মূল আওলাদও নন। তাই তাদেরকে যাকাত প্রদান করতে শরীয়তের কোন বাধা নেই। তবে আপন বা সহােদর মা, সহােদর পিতা, সহােদর দাদা, দাদী এবং আপন সহােদর রক্তের সন্তানদেরকে যাকাত-ফিতরা প্রদান শুদ্ধ নয়। -
(কিতাবুল হিদায়া ও রদুল মুহতার যাকাত পর্ব ইত্যাদি)

 প্রশ্নঃ কৃষি জমিতে উৎপন্ন ফসলের যাকাত দিতে হবে কিনা?

🖋উত্তর ঃ ফিক্বহ শাস্ত্রে জমিকে ৩ শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। ১. উশরী, ২. খারাজী ও ৩. উশরীও নয় আবার খারাজীও নয়।
যে ভূমি মুসলমানগণ অমুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয়সূত্রে লাভ করেছে এবং মুসলমান রাষ্ট্র প্রধান তা মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছেন তাকে উশ্রী জমি বলা হয়। এ রূপ কোন স্থানের অধিবাসীগণ বিনাযুদ্ধে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে তবে তাদের জমিগুলােও উশরি জমিতে পরিণত হয়। কিন্তু অমুসলিমের জমি যদি কোন যুদ্ধের ফলে লব্ধ না হয়ে থাকে, বরং বিনা যুদ্ধে সন্ধিসূত্রে লাভ হয়ে থাকে এবং ওই জমি অমুসলিমের দখলেই থাকতে দেয়া হয় তবে তা উশরি জমিতে পরিণত হয় না। বরং খারাজী জমি হিসেবে গণ্য। পরবর্তীতে এ জমি কোন মুসলমান ক্রয় করলেও তা খারাজী জমির অন্তর্ভূক্ত হবে। আর মুসলমানরা দেশ জয় করার পর যে জমি কিয়ামত পর্যন্ত নিজের জন্য স্থায়ী করে নিল অথবা ভূমির মালিক মৃত্যুর পর কোন ওয়ারিশ না থাকায় বায়তুল মালের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলাে -এ প্রকার ভূমি উশরিও নয় খারাজীও নয়। উশরি জমির ক্ষেত্রে ওই জমির উৎপন্ন শস্য বা ফসলের উপর ‘উশর’ ফরয হয় আর খারাজী জমির উৎপন্ন শস্য বা ফসলের উপর ‘উশর ওয়াজিব নয় বরং খারাজী জমির সরকার কর্তৃক ভূমি কর আদায় করা রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। উশরি জমিতে বৃষ্টির পানি দ্বারা ফসল উৎপন্ন হলে তাতে উৎপন্ন শস্যের উপর এক দশমাংশ ‘উশর’ দেয়া ওয়াজিব। আর যে সব উশরি জমিতে নদী-নালা, কূপ ইত্যাদি হতে পানি সিঞ্চন করতে হয় এমন জমির উৎপন্ন ফসলের বিশভাগের একভাগ উৎপাদিত শস্যাদি থেকে গরীব-মিসকীনকে দিতে হয়। বর্তমান আমাদের বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের ভূমিগুলাে উশরি না খারাজী তা নির্ধারণ করতে গিয়ে ফিক্বহবিদগণের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে বিধায়, আমাদের দেশীয় জমির ‘উশর’ বা উৎপন্ন শস্যের দশভাগের একভাগ ‘উশর আদায় করে দেয়াই অধিক নিরাপদ। এ ব্যাপারে ইমাম আ'লা হযরত শাহ আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি কৃত: ‘ফাতওয়া-ই রজভিয়া’তে বিস্তারিত আলােচনা করেছেন।
[ফাতওয়া-ই রজভিয়া ও হেদায়া ইত্যাদি। এস এম আবদুল্লাহ শিবলী ২৬৬/২, পশ্চিম আগারগাঁও, ঢাকা-১২০৭।]#

▪ প্রশ্নঃ স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার যাকাতের নিসাব পরিমাণ কত?

উত্তর ঃ যদি ওই নিসাব পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার স্বামী- স্ত্রীকে যৌতুক হিসেবে প্রদান করে বা স্বামী স্ত্রীকে মালিক বানিয়ে দেয়, তবে যাকাত স্ত্রীকে দিতে হবে। আর যদি স্বর্ণালঙ্কার স্বামী, স্ত্রীকে শুধু পরিধান করতে দিয়ে থাকে, তবে স্বামীকেই যাকাত দিতে হবে। এরফানে শরীয়ত, কৃত: ইমাম আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। 

▪ প্রশ্নঃ হানাফী মুক্তাদি অন্য মাযহাবের ইমামের পিছনে বিতির সালাত আদায় করতে পারবে কিনা?

📌মুহাম্মদ খােরশেদুল আলম
নাইয়া, দিব্বা, ফুজিরা, ইউ এ ই।


উত্তর ঃ ওই নামাযগুলাে যেহেতু আদায় হয়নি, সেহেতু যত ওয়াক্তের বিতর নামায অনাদায়ী রয়েছে, তা হিসাব করে কৃাজার নিয়্যত করে কাজা দিবে। সূর্যোদয়কাল, সূর্য মাঝ আকাশে স্থিরকালে এবং অস্তকাল -নিষিদ্ধ এ তিন ওয়াক্ত ছাড়া সময়-সুযােগ মত যেকোন সময় কৃাজা পড়া যায়। অধিক কৃাজা নামায আদায়ে সহজতার জন্য প্রত্যেক রুকু ও সাজদার তাসবীহ একবার করে পড়বে আর দুআ-ই কুনূত’-এর স্থলে শুধু একবার বা তিনবার ‘রব্বিগফিরলী’ বলবে। এভাবে অনাদায়ী সকল বিতর নামায অবশ্য আদায় করার চেষ্টা করবে।
[আহকামে শরীয়ত, কৃত: আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হি

▪ প্রশ্নঃ রমজান মাসে জাহান্নামের দরজা এবং কবরের আজাব বন্ধ থাকে কিনা? বিধর্মীদের ক্ষেত্রে বিধান কি?

🖋উত্তর ঃ রমজান মাসে দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ থাকে এটা নবী করিম সাল্লাল্লাহু। তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র বাণী দ্বারা প্রমাণিত যা প্রায় হাদিসের কিতাবসমূহে রয়েছে। রমজান মাসে দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ থাকার কারণে সকল গুণাহগার বিশেষত হিন্দু, বৌদ্ধ, কাফির ও মুনাফিক ইত্যাদির কবরসমূহে দোযখের গরম ও উত্তাপ পৌছে না। তাই রমজান মাসে কোন নাফরমানের কবরে দোযখ থেকে প্রবাহমান গরম ও উত্তাপ পৌছে না। কিন্তু মুনকির নকিরের সওয়াল জওয়াবের পর দোযখ থেকে আসা গরম উত্তাপ ছাড়া অন্যান্য আযাব সমূহ যা কবরে নির্ধারিত যেমন আযাবের ফেরেশতা কর্তৃক লৌহার হাতুড়ি দ্বারা আঘাত করা ইত্যাদি রমজান মাসেও নাফরমানদের জন্য বিদ্যমান থাকবে। মুসলিম সমাজে রমজান মাসে কবরের আযাব হয় না বলে যে কথা প্রসিদ্ধ আছে তার অর্থ হল দোযখের দরওয়াজা বন্ধ থাকার কারণে জাহান্নামের গরম উত্তাপ যা সরাসরি দোযখ থেকে কবরে আসে তা শুধু বন্ধ থাকে। [সেরাতুল মনাজিহ, শরহে মেশকাতুল মাসাবিহ, কৃত: মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী]। রােজা রাখতে একেবারে অক্ষম যার সবল হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই যাকে শরিয়তের পরিভাষায় শেখে ফানী বলা হয়, তার রােজার ফিদিয়া হল প্রতি রােজা পিছু এক ফিতরা বা একজন মিসকিনকে দু'বেলা খানা খাওয়ানাে সেভাবে ত্রিশ রােজা ফিদিয়া হল ত্রিশ ফিতরা বা ত্রিশজন মিসকিনকে দু'বেলা অথবা একজন মিসকিনকে ৩০ দিন দু'বেলা
খানা খাওয়ানাে । উক্ত ফিদিয়ার অর্থ বা খাবার সাধারণভাবে সকল প্রকারের মুসলিম মিসকিনদেরকে দেওয়া যাবে। তবে মুসলিম নেককার মিসকিনকে দেওয়া উত্তম ও মঙ্গলময়।
[মেরকাত, মেরাত, শরহে মেশকাত ও কিতাবুল ফিকহ আলাল মাজাহিবিল আরাবায়া ইত্যাদি]

▪ প্রশ্নঃ কোন ডায়াবেটিস রােগী পারিবারিক কারণে  রমজানে বিষপান করল। তাকে মেডিকেলে নেওয়ার পর বিষক্রিয়া ঠিক হলেও ১৫ দিন পর ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পেয়ে সে মারা যায়। প্রশ্ন হল সে বিষ পান করার দরুণ ডাবাবেটিস বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে সে মৃত্যুবরণ করেছে। তার জানাযায় এবং মেজবানে যাওয়া যাবে কিনা? আর রমজানে। বিষপানের কারণে রােযার কাফফারা হবে কি না?

🖋উত্তরঃ কোন কারণে অকারণে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে বিষপান করা মারাত্মক অপরাধ এবং কবিরা গুনাহ, অতএব, বিষপান করার পর হায়াতে বেঁচে থাকলে অবশ্য আল্লাহর দরবারে খালিচ নিয়তে তাওবা, ক্ষমা প্রার্থনা করবে, বিষপানের ফলে ডায়াবেটিকস বা অন্য রােগ বৃদ্ধি পেলে এবং সে কারণে মৃত্যুবরণ করলে তার নামাজে জানাযা পড়া যাবে এবং মেজবানেও যেতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা নেই। রমজানের রােজাবস্থায় বিষপানের কারণে রােজার কাফফারা অবশ্যই আদায় করতে হবে। রমজানের রােজা ইচ্ছা করে ভঙ্গ করার কাফফারার মত। অর্থাৎ উক্ত ব্যক্তি যদি জীবনে বেঁচে থাকে তবে সে উক্ত রােজার কাফফারা হিসেবে লাগাতার ৬০টি রােজা রাখবে, আর একটি কাযা রােযা আদায় করবে আর অক্ষম হলে ষাটজন মিসকিনকে পেট ভরে দুবেলা খাবার দেবে। রােজা অবস্থায় বিষপানের কারণে মৃত্যুবরণ করলে তার। অলি-ওয়ারিশ ও সন্তানগণ তার পরিত্যক্ত মাল থেকে কাফফারা স্বরূপ ষাটজন মিসকিনকে পেটভরে দুবেলা খানা খাওয়াবে। উল্লেখ্য যে, বিষপান করে মারা গেলে অথবা বিষপান করার কারণে রােগাক্রান্ত হয়ে মারা গেলে বিশুদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী তার নামাজে জানাযা পড়া যাবে কাফন, দাফন করা যাবে এবং তবে উল্লেখযােগ্য প্রসিদ্ধ মুফতি/খতিব দ্বারা তার নামাযে জানাযা পড়াবে না বরং সাধারণ কোন অপরিচিত মােল্লা/মিজ্জি দ্বারা নামাযে জানাযা পড়াবে। যাতে এলাকায় প্রভাব সৃষ্টি হয় এবং বিষপান হতে মানুষ বিরত থাকে।
[রুদ্দুল মােহতার ও হিন্দিয়া ইত্যাদি]

▪ প্রশ্নঃ রমজানে রােজা থাকা অবস্থায় কোন ব্যক্তির স্বপ্নদোষ হলে করণীয় কি?

উত্তর ঃ রমজান মাসে রােজা থাকা অবস্থায় কোন ব্যক্তির স্বপ্নদোষ হলে তার রােজা ভঙ্গ হবে না এবং মকরূহও হবে না বরং রােজা সঠিক থাকবে। তবে গােসল ও পবিত্রতা অর্জনে কালবিলম্ব না করবে বরং তাড়াতাড়ি গােসল করে পবিত্র হয়ে যাবে। ইচ্ছাকৃত গােসল করতে বিলম্ব করলে গােনাহগার হবে। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে। জানাবতওয়ালা ব্যক্তি যে ঘরে থাকে সেখানে রহমতের ফেরেশতা নাযিল হয় না।
দুররুল মুখতার ও ফতােয়ায়ে হিন্দিয়া ইত্যাদি। মুহাম্মদ মীর কাশেম মানিক হাজী বাদশা মাবেয়া কলেজ। 

▪ প্রশ্নঃ ই'তিকাফরত অবস্থায় ফরয গােসল ব্যতীত প্রত্যহ গােসল করার জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবে কিনা? হেফাজতের নিয়্যতে ব্যংকে টাকা জমা রাখা যাবে কিনা?

🖋উত্তর ঃ
১. ই'তিকাফরত অবস্থায় স্বপ্নদোষের কারণে গােসল ফরজ হলে এবং মসজিদের ভিতরে অজু ও গােসলের জন্য কোন ব্যবস্থা না থাকলে তখন ই'তিকাফকারীর গােসলের জন্য মসজিদের বাহিরে যাওয়া জায়েয, ফরজ গােসল ছাড়া অন্য যে কোন ধরণের গােসলের জন্য সাধারণত বাহিরে গমণ করার অনুমতি নাই। তবে কয়েকদিন গােসল না করার কারণে বা বেশী গরমের দরুণ যদি শরীর অস্থির হয়ে পড়ে, তখন বিশেষ প্রয়ােজনে ক্ষতি হতে বাচার জন্য গােসল করতে বের হতে পারবে। এরিয়ায় অযু-গােসলের ব্যবস্থা থাকলে তখন ফরয গােসলের জন্যও বের হওয়ার অনুমতি নাই।
২. হেফাজতের নিয়তে ব্যাংকে টাকা জমা করা শরিয়ত সম্মত। তবে জমাকৃত টাকার উপর বর্ধিত অংশ যা ব্যাংক কর্তৃক দেওয়া হয় তাতে শরিয়তের দৃষ্টিতে সুদের অবকাশ থাকায় উক্ত বর্ধিত টাকা গ্রহণ করে নিজস্ব কোন প্রয়ােজনে ব্যবহার না করে ছাওয়াবের নিয়ত ছাড়া ফকির-মিসকিন দেরকে দিয়ে দিবে।
[ফতােয়ায়ে আমজাদিয়া ও ফতােয়ায়ে ফয়জে রসুল ইত্যাদি]


▪ প্রশ্নঃ মাহে রমজানে তারাবীর নামাজের হাদিয়া ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করে ইমাম সাহেবদেরকে ২৪ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা কমিটির ইচ্ছামত মসজিদে লাগানাে জায়েজ কিনা?

🖋উত্তর ঃ মাহে রমজানে হাফেজ সাহেবান ও ইমাম সাহেবকে সম্মানী সূচক হাদিয়া প্রদানের উদ্দেশ্য যে টাকা মুসল্লীদের পক্ষ থেকে রাজি ও স্বীয় খুশীতে নেয়া হয় তা থেকে তাদেরকে যথাযথ সম্মানজনক হাদিয়া প্রদানের পর ইমাম হাফেজ সাহেবানের সন্তুষ্টিতে অবশিষ্ট অংশ মসজিদের কাজে ব্যবহার করতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা নাই। যদি টাকা গ্রহণের সময় সেভাবে গ্রহণ করা হয়। তবে ইমাম ও হাফেজ সাহেবানদেরকে স্বল্প পরিমাণ দিয়ে বাকি সব টাকা মসজিদের ফাণ্ডে রেখে দেয়া উচিত নয়।

 প্রশ্নঃ রােজা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনহেলার, সাপোসিটার ব্যবহারে রোজা কি ভঙ্গ হয়ে যায়?

🖋উত্তরঃ রােজা অবস্থায় ইনজেকশন ব্যবহার করলে রােজা নষ্ট হবে কি না বর্তমান বিশ্বের মুফতিগণ এ ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মত পােষণ করলেও রােজা অবস্থায় ইনজেকশন ব্যবহার না করাই নিরাপদ ও রােজা নষ্ট হওয়ার আশংকা হতে মুক্ত। তদুপরি ইনজেকশন ইফতারের পর রাত্রি বেলায়ও প্রয়ােজনে দেয়া যায়। তদ্রুপ যে সমস্ত রােগী ইনহেলার ব্যবহার ব্যতীত রােজা আদায় করতে অক্ষম তারা রমজানের পর সুস্থ হলে কাযা আদায় করবে, আর সুস্থ না হলে রমজানের প্রতিটি রােজার বিনিময়ে ফিদয়া/ কাফফারা (প্রতি রােজার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে দু'বেলা আহার দান অথবা অর্ধ ‘সা’ তথা দু'কেজি ৫০ গ্রাম গম প্রদান করবে) ইনসুলিন সাধারণত ডায়াবেটিস রােগীরা আহারের কিছুক্ষণ পূর্বে ব্যবহার করে থাকেন, যা রােজা অবস্থায় ব্যবহার করলে রােজা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা বেশি বিধায় ইনসুলিন ইফতারের ঠিক সময়ে গ্রহণ করে কিছুক্ষণ পর ইফতার সামগ্রী আহার করবেন। তদ্রুপ পায়খানার রাস্তায় ডােজ ব্যবহার, নাক, কান ও চোখের ড্রপ ব্যবহারে রােজা নষ্ট হওয়ার আশংকা বেশি থাকে। যেমন ফোকাহায়ে কিরাম রােযা অবস্থায় নশ টানা নিষেধ করেছেন। সুতরাং রােজা অবস্থায় ডােজ ব্যবহার নাক, কান ও চোখের ড্রপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই শ্রেয় ও নিরাপদ। তদুপরি ডােজ ব্যবহার, কান, নাক ও চোখের ড্রপ ইফতারের পর রাতের বেলায় সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নাই বিধায় রােজা অবস্থায় ব্যবহার না করাই নিরাপদ। রােজা অবস্থায় বিশেষ প্রয়ােজনে মুমূর্ষ রােগীর প্রাণ রক্ষার্থে রক্ত দান করলে কোন অসুবিধা নেই।

 প্রশ্নঃ মসজিদের বারান্দায় ইতিকাফ করা যাবে কিনা?

🖋উত্তরঃ মসজিদের বারান্দা মসজিদের হুকুমের শামিল। যারা মসজিদের বারান্দাকে মসজিদের বাহিরে বলে তারা ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাদের দাবি ভিত্তিহীন। ইমামে আহলে সুন্নাতে মুজাদ্দিদে দ্বীনও মিল্লাত আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি উক্ত মাসআলাকে ভিত্তি করে নামক একটি কিতাব রচনা করেছেন এবং তিনি উক্ত কিতাবে অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, মসজিদের বারান্দা মসজিদের হুকুমের শামিল। তাই কেউ মসজিদের বারান্দায় ই'তিকাফ পালন করলে তিনি উক্ত ই'তিকাফ মসজিদেই পালন করল। এর মধ্যে কোন তফাৎ নেই। সুতরাং উক্ত ই'তিকাফ শরীয়ত মােতাবেক শুদ্ধ হবে এবং শরীয়তসম্মত পন্থায় সকল বিধি নিষেধ ইত্যাদি মেনে ই'তিকাফ পালন করলে ইনশা আল্লাহ আল্লাহর দরবারে মকবুল হবে। তবে বারান্দার চেয়ে মসজিদের ভিতরেই ইতিক্বাফ পালন করা উত্তম। 

▪ প্রশ্নঃ রমজান মাসে এশার নামাযের পরে তারাভীহ ও বিতিরের জন্য কি নির্দিষ্ট কোন সূরা পড়তে হবে?

🖋উত্তর ঃ নামাযে কোরআন করীমের সূরা বা আয়াত পাঠকালে কোন নির্দিষ্ট সূরা বা আয়াতের নির্ধারণ করা আবশ্যকীয় বা জরুরি নয়। বরং যে কোন সূরা বা আয়াতের মাধ্যমে কোরআন করীমের তিলাওয়াত হলে কিরআত ফরজ আদায় হয়ে যাবে। সুতরাং সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস বা অন্য যে কোন সূরা বা আয়াত সূরা ফাতেহার সাথে মিলিয়ে পড়লে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। [ফতােয়া হিন্দিয়া, খানিয়া]

▪ প্রশ্নঃ কোন কোন ব্যক্তি রােযা রেখেও গোপনে পানাহার করে। তারা আবার রােযাদারের মত নামাযও পড়েন ইফতারও করেন। এরূপ ব্যক্তির শাস্তি কীরূপ?

🖋উত্তর ঃ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম হল “রমজান মাসে রােযা রাখা। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবেকসম্পন্ন ঈমানদার নর-নারীর উপর রমজান মাসের রােযা রাখা ফরজ-ই আইন। এটাকে অস্বীকার করা কুফর (অর্থাৎ আবার ঈমান আনতে হবে)। শরয়ী ওযর ব্যতীত ইচ্ছা করে উক্ত রােযা ভঙ্গ করা হারাম ও কবীরা গুনাহ। আর রােযার নিয়্যত করে সাহরী গ্রহণের পর দিনের বেলায় কোন শরয়ী ওযর ব্যতীত রােযা ভঙ্গ করলে কাযা ও কাফফারা উভয়ই মিলে (কাযা একটি, কাফফারা ষাটটিসহ) প্রতিটি রােযার জন্য মােট একষট্টিটি করে রােযা আদায় করতে হবে। তারপরেও রমজানুল মুবারকের একটি রােযার সমান হয় না। তাই রােযা ভঙ্গ করা থেকে বিরত থাকা এবং ইচ্ছাকৃত এমন জঘন্য হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক ঈমানদারের উপর অপরিহার্য। [ফতােয়ায়ে হিন্দিয়া]

 প্রশ্নঃ রমজান মাসের শবে কদরের রাতে তারাবীহ নামায আগে পড়ব নাকি শবে ক্বদরের নামাজ আগে?

🖋উত্তর ঃ যেসব মুসল্লী কদরের রাতে নামাযে এশা ও তারাবীহ নামায জামাআত সহকারে আদায় করেছে, তারা বিতরের নামাযও ইমাম সাহেবের সাথে জামাআত সহকারে আদায় করবেন, এটা উত্তম পন্থা। আর শবে কদরের নফল নামায নামাযে বিতরের আগেও পড়া যাবে, পরেও পড়া যাবে এতে কোন অসুবিধা নেই

▪ প্রশ্নঃ রমজানের প্রথম রােযা যেদিন রাখা হবে, ঐ বছর ঐ দিনেই কি ঈদুল আজহা পালিত হবে?

উত্তর ঃ শরীয়তের বিধান মতে উপরােক্ত হিসাব স্থায়ী ও চূড়ান্ত নয়। কোন কোন সময় হতে পারে, সম্ভাবনা আছে। তবে ‘আজাইবুল মাখলুকৃাত’র বরাত দিয়ে আল্লামা আবদুর রহমান ছফুরী রহমাতুল্লাহি তাআলা আলায়হি স্বীয় রচিত ‘নুযহাতুল মাজালিস’-এ হযরত ইমাম জাফর সাদিক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু’র একটি বর্ণনা উপস্থাপন করে বলেছেন যে, গত বৎসর রমজানুল মুবারকের পঞ্চম তারিখ পরের বৎসর রমজানুল মুবারকের প্রথম তারিখ একই দিন হয়ে থাকে এবং উক্ত বর্ণনাকে পঞ্চাশ বৎসর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, আর সঠিক পাওয়া গেছে। তবে ‘নুযহাতুল মাজালিস’ ছাড়া অন্য কোন প্রামাণ্য কিতাবে ইমাম জাফর সাদিক রদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু উপরােক্ত বর্ণনা প্রদত্ত হয়েছে কিনা? তা আমার দৃষ্টিগােচর হয়নি। হ্যাঁ, নুযহাতুল মাজালিস’র বর্ণনাকে পরীক্ষা করে দেখলে বাস্তবতা বেরিয়ে আসবে। আর প্রশ্নোল্লিখিত নিয়মটি এ যাবৎ কোন প্রামাণ্য কিতাবে আমার নজরে আসেনি, আল্লাহ রসূলই ভাল
জানেন।

▪ প্রশ্নঃ এশার নামাজ জামায়াতে আদায় না করলে তারাবিহ ও বিতির কি জামাতে আদায় করা যাবে?

🖋উত্তরঃ মাসিক তরজুমানের ফতােয়ায়ে আলমগীরী ও রদুল মুহতারের বরাত দিয়ে বর্ণিত মাসআলা এবং মাসিক আল-মুবিনের সগীরীর বরাত দিয়ে বর্ণিত মাসআলার মাঝে কোন বৈপরিত্য নেই; বরং উভয় বর্ণনাই শুদ্ধ। বরং মাসিক তরজুমানে বর্ণিত মাসআলার উপর আমল করাটা মুস্তাহাব তথা উত্তম হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। কেননা, রমজান মাসে তারাবীহ ও বিতরের জামাতের হুকুম এশার ফরজ নামায জামাআতে পড়া-না পড়ার উপরই নির্ভরশীল। তাই কেউ কেউ এশার ফরজ নামায জামাতে আদায় না করলে তার জন্য তারাবীহ ও বিতর জমাতে পড়া আবশ্যক নয় মর্মে মত প্রকাশ করেছেন। আর যদি কেউ এশার ফরজ নামায জামাতে আদায় না করে তারাবীহ ও বিতর জামাআতে পড়তে চায়, তাহলে পড়া যাবে মর্মে মত প্রকাশ করেছেন। উভয় বর্ণনায় আমল করা যাবে, অসুবিধা নাই। 

▪ প্রশ্নঃ বিতরের নামায শবে বরাতের রাতে জামাআতে পড়লে কোন অসুবিধা আছে?


🖋উত্তর ঃ রমজান মুবারক ছাড়া অন্য সময়ে বিতরের নামায জামাআত সহকারে আদায় করা শরীয়ত সমর্থিত নয়। বিতরের নামায জামাআত সহকারে আদায়ের হুকুম রমজান মােবারকের সাথেই সম্পৃক্ত। যেহেতু ফারূকৃ-ই আ'যম হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু যখন খেলাফতের আসনে সমাসীন হলেন, তখন তিনি তারাবীহ ও বিতরের নামাযকে জামাআত সহকারে আদায়ের ব্যবস্থা করলেন এবং বললেন - (এটা কতই উত্তম বিদআত)। অতঃপর সাহাবা-ই কেরাম তাঁর ওই কাজকে নির্দ্বিধায় সমর্থন করলেন। তারপর থেকে পবিত্র রমজান মাসে তারাবীহ ও বিতরের নামায জামাআতসহ আদায় করা সুন্নাত হিসেবে প্রচলিত হল। আর রমজান ছাড়া অন্য মাসে বিতরের নামায জামাআত সহকারে পড়বে না। তদ্রুপ শবে বরাতেও বিতরের নামায জামাআতে পড়বে না। কোন ইমাম ভুল বা অজ্ঞতা বশতঃ শবে বরাতে বিতরের নামায জামাআত সহকারে পড়ে ফেললে মাকরূহ হবে এবং এ জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। -ফতােয়ায়ে হিন্দিয়া ও রদুল মুহতার ইত্যাদি)

▪ প্রশ্নঃ তারাবীহ নামাযে সাহু সাজদা আছে কি?

🖋উত্তর : জুমুআ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা ছাড়া যত রকমের নামায রয়েছে প্রত্যেক নামাযে সাজদা-এ সাহুর বিধান আছে। জুমুআ ও উভয় ঈদের নামাযে মুসল্লীদের উপস্থিতি ব্যাপকহারে হয়, বিধায় সাহু সাজদার ফলে মুসল্লীদের মধ্যে ফিতনার আশঙ্কা থাকে। তাই ফুক্বাহা-ই এযাম উক্ত নামাযে সাহু সাজদা দেয়া ওয়াজিব হলেও না দেওয়াকে উত্তম বলেছেন। আর জুমুআ ও দু’ঈদের জামাত ছােট হলে তখন সাজদা-এ সাহু ওয়াজিব হলে আদায় করে দিবে। তারাবীহ তথা অন্যান্য নামাযে নামাযের ওয়াজিবসমূহ থেকে কোন ওয়াজিব ভুলবশতঃ বাদ পড়লে আর নামাযে থাকা। অবস্থায় স্মরণ হলে, সাহু সাজদা দেওয়া ওয়াজিব। উক্ত সাহু সাজদা দ্বারা নামাযের ত্রুটি দূরীভূত হয়ে যায় এবং নামায পরিপূর্ণ ও শুদ্ধ হয়ে যায় এবং মহান আল্লাহর দরবারে গ্রহণযােগ্য হয়; অন্যথায় নামায শুদ্ধ হয়না এবং আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না। তাই কোন ওয়াজিব ভুলবশতঃ বাদ পড়লে অবশ্যই সাহু সাজদা দিবে; কিন্তু কোন ফরজ বাদ পড়লে সাহু সাজদা দিলে হবেনা, ওই ফরজ বাদ পড়া নামাযগুলাে পুনরায় আদায় করতে হবে। 

▪ প্রশ্নঃ মসজিদে এসে দেখলাম তারাবিহ শুরু হয়ে গেছে আগে এশা পড়ব নাকি তারাবিহ পড়ব?

🖋উত্তর ঃ কেউ মসজিদে এসে দেখল- তারাবীহর নামায আরম্ভ হয়ে গেছে। তবে এশার ফরয নামায না পড়ে থাকলে প্রথমে এশার ফরয নামায একাকীভাবে আদায় করে নেবে। পরে তারাবীহর জামাআতে শরীক হবে। এশার ফরয নামাযের জামাআতে শরীক
হলে বিতর নামায একাকী আদায় করবে। আর যদি কেউ এশার নামায জামাআত সহকারে আদায় করে কোন কারণে তারাবীহর কিছু নামায ছুটে যায়, তবে প্রথমে ইমামের সাথে তারাবীহর নামাযে শরীক হবে। ইমামের সাথে বিতর নামায আদায় করে ছুটে যাওয়া তারাবীহর নামায আদায় করা উত্তম। ইমামের সাথে বিতরের নামায না পড়ে, আগে ছুটে যাওয়া তারাবীহ পড়ে, পরে একাকীভাবে বিতর পড়াও জায়েয আছে।
-(আলমগীরী ও রদুল মুহতার ইত্যাদি) 

▪ প্রশ্নঃ মসজিদে কোন অন্ধ হাফেয বদআকিদা ধারী হলে তার পিছনে কি নামাজ পড়া যাবে?

উত্তর ঃ জামাআতে উপস্থিত লােকদেরমধ্যে নামাযের বিধি-বিধান জানা বিশুদ্ধ কোরআন পাঠে সক্ষম ও সহীহ আকীদাহ সম্পন্ন লােক বিদ্যমান থাকলে, তখন অন্ধের ইমামত মাকরূহে তানযীহি। যদি জামাআতে ওই অন্ধ ব্যক্তির চেয়ে নামাযের। বিধি-বিধান জানা, বিশুদ্ধ কোরআন শরীফ পাঠে কেউ সক্ষম না থাকে, আর ওই অন্ধ হাফেয বা ইমামের আকীদাহও শুদ্ধ হয়, তবে ওই অন্ধের ইমামতই উত্তম। যদি জামাআতে উপস্থিত লােকদের মধ্যে পবিত্র কোরআন বিশুদ্ধভাবে পাঠকারী কোন বাতিল আক্বীদাধারী বা প্রকাশ্যে পাপ কাজ করে, এমন ব্যক্তি (ফাসিকৃ-ই মুমিন) থাকে আর অন্ধ ব্যক্তি যদি ওই সব দোষ থেকে পবিত্র হন, তবে ওই অন্ধের ইমামত করা আবশ্যক। আর ওই অন্ধ ব্যক্তি কোরআন শরীফ বিশুদ্ধভাবে পাঠ করতে সক্ষম এবং নামাযের বিধি-বিধান সম্পর্কেও ওয়াকিফহাল, কিন্তু ওহাবী-দেওবন্দী, শিয়া-আহলে হাদীস, লা-মাযহাবী ইত্যাদি বাতিল আক্বীদায় বিশ্বাসী হয়, তবে ওই অন্ধ ইমাম-খতীব-হাফেযের পেছনে কোন অবস্থায় কোন মুসলমানের ইকৃতিদা করা জায়েয হবে না। হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
তােমরা তাদের সাথে নামায পড়ােনা। -(মুসলিম) বিশ্ববিখ্যাত ফিক্হগ্রন্থ ‘গুনিয়াহ’তে উল্লেখ আছে

অর্থাৎ বিদআতী (যার আকীদাহ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত পরিপন্থি) তাকে ইমাম বানানাে মাকরূহে তাহরীমাহ। কেননা আকীদাগত ফাসিক আমলগত ফাসিকের চেয়ে মারাত্মক অপরাধী। সুতরাং প্রশ্নোল্লিখিত অন্ধ হাফেয যেহেতু আকীদাগত ওহাবী তথা নবীবিদ্বেষী, সেহেতু তার পেছনে নামায আদায় করা নাজায়েয ও গুনাহ।
-(গুনিয়াহ ও ফতােয়া-ই রেজভিয়া ইত্যাদি।)

▪ প্রশ্নঃ মসজিদে কোন হক দ্বীনী সংগঠন বা ত্বরীকতের সংঘটন কর্তৃক ইফতার মাহফিল কি জায়েজ?


🖋উত্তর ঃ মসজিদের মধ্যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শালােকে গঠিত সংস্থা ও সংগঠনের উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল, যিকর মাহফিল, ইফতার মাহফিল করা জায়েয। যেহেতু মসজিদ আল্লাহর যিকর, নামায ইত্যাদির জন্য নির্মাণ করা হয়। সেহেতু তা মসজিদে করাও জায়েয। তবে ইতিকাফকারী ছাড়া অন্য কারাে জন্য মসজিদে পানাহার করা জায়েয নেই। তাই নফল ইতিকাফের নিয়্যত করেই মসজিদে আয়ােজিত ইফতার মাহফিলে রােযাদারগণ ইফতার করবে। তবে মসজিদের যেন বেহুরমতি না হয় এবং অপরিস্কার না হয় সেদিকে অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে। মসজিদে আয়ােজিত ইফতার মাহফিলের রােযাদার মুসল্লীরা ইফতার গ্রহণের পর পর উক্ত মসজিদে মাগরিবের নামায আদায় করবে বিধায় অন্যান্য মুসল্লীর ন্যায় তারাও প্রয়ােজনে মসজিদের পানি, চাটাই ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবে কোন অসুবিধা নেই।

▪ প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি রােযা রাখেনি তার উপর সাক্বাতুল ফিতর কি ওয়াজিব?

উত্তর ঃ সাদক্বাহ-ই ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য রােযা রাখা শর্ত নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক হবে তার জন্য সাদক্বাহ-ই ফিতর আদায় করা অবশ্যই ওয়াজিব। তাই কোন ব্যক্তি শরঈ কোন ওজরের কারণে যেমন- সফর, রােগ ও অক্ষমতার কারণে রােযা রাখে নাই অথবা কোন কারণ ছাড়া রােযা না রাখলে তারপরও তার উপরও সাদক্বাহ-ই ফিতর ওয়াজিব, যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়।-এরদুল মুহতার)

▪ প্রশ্নঃ খতমে তারাবিহ চলকালীন একদিন অনিচ্ছাকৃত মিস হয়ে গেলে খতম কি পূর্ণ হবে?

🖋উত্তর : আমাদের হানাফী মাযহাব মতে বিশ রাকআত তারাভীহর নামায সুন্নাতে মুআক্কাদাহ এবং তারাভীহর নামাযে এক খতম কোরআন আদায় করাও সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। শরঈ কোন ওজর ছাড়া কোন পুরুষ বা মহিলা অলসতাবশত তারাভীর নামায না পড়লে অবশ্যই গুনাহগার হবে। কেউ খতমে তারাভীহতে নিয়মিত অংশগ্রহণ
করতে না পারলে তার খতম পরিপূর্ণ হবে না। বিধায় পবিত্র কোরআন খতমের সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। তাই কেউ কোন বিশেষ প্রয়ােজনে খতমে তারাভীতে অংশগ্রহণ করতে না পারলে খতমে কোরআনের এবং সুন্নাতে মুআক্কাদাহর সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। আর শক্তি-সামর্থ্য ও সুযােগ থাকার পরও অলসতা বশতঃ খতেম তারাভীহ ছেড়ে দেওয়া গুনাহ। অবশ্য বিশেষ কারণে যদি খতমে তারাভীহ ছুটে যায়, তবে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আর নিজে হাফেয-ই কোরআন হলে ছুটে যাওয়া তিলাওয়াত দ্বিতীয় দিন নামাযে তারাভীহতে পড়ে নিবে। এ পদ্ধতিতেও খতমে কোরআন আদায় হয়ে যাবে।

▪ প্রশ্নোত্তরে ইতিকাফ

📌✉ মুহাম্মদ আবদুস শুক্কুর বখতপুর, ফটিকছড়ি।
প্রশ্ন ঃ রমজান মাসে শেষ দশ দিন ‘ইতিকাফ’ নেয়া কি? যদি সমাজ থেকে মসজিদে কেউ ইতিকাফ না নেয় তাহলে শরীয়তের বিধান কি? গত রমজান মাসে মসজিদে ইতিকাফ নেয়া হয়নি। অনেকে বলছে এ বছর ২০ দিন ইতিকাফ নিতে হবে। আর কেউ বলছে নিতে হবে না। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। আশা করি সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে। এটা নিরসনে বাধিত করবেন।


🖋উত্তর : পবিত্র রমজান শরীফের শেষের দশদিন নির্ধারিত ইমামের মাধ্যমে জামাত অনুষ্ঠিত হয় এমন মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মহল্লাবাসীর কেউ যদি ইতিকাফ করে তাহলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কেউ ইতিকাফ না করে তাহলে সকলেই সমানভাবে গুনাহগার হবে। কোন ঘটনাক্রমে কোন মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে যদি কেউ এ সুন্নাত ইতিকাফ পালন না করে থাকলে, তা পরবর্তীতে কাজা করার বিধান নেই। বরং এ গুনাহর জন্য আল্লাহর দরবারে সবাই ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ কার্য সংগঠিত না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে। তবে ইতিকাফ থাকাকালীন কোন কারণে যদি কারাে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়, তা পরবর্তীতে রােযাসহ কাজা করে দেয়ার বিধান রয়েছে।
[ফতােয়া-ই হিন্দিয়া ইত্যাদি দেখুন। ]

📌মুহাম্মদ আবুল কাসেম ভেন্ডার
চাপাতলী, আনােয়ারা, চট্টগ্রাম।
প্রশ্নঃ পবিত্র মাহে রমজান মাসের শেষ দশ দিন মুসলমানকে জামে মসজিদে ই'তিকাফ পালন করা সুন্নাত। আমাদের মসজিদে গত বছর যারা ই'তিকাফ পালন করেন, তারা গােসল করেছেন। কিন্তু জনৈক মৌলভী সাহেব বলেছেন, ই'তিকাফকারী ফরজ গােসল ব্যতীত দৈনিক গােসল করা ভাল নয়। এতে ই'তিকাফকারীর পক্ষে সাওয়াব’র ক্ষতি হয়। তাই ই'তিকাফের সময় গােসলের ব্যাপারে শরীয়তের বিধি-বিধান
কী তা জানালে উপকৃত হব।


🖋উত্তর ঃ ওয়াজিব ই'তিকাফ যেমন মান্নতকৃত ই'তিকাফ এবং সুন্নাত ই'তিকাফ যা রমজানের শেষ দশকে করা হয়, যা সুন্নাত-ই মুআক্কাদাহ আলাল কিফায়াহ। এ দু’প্রকার ই'তিকাফে বিনা প্রয়ােজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া হারাম। বিনা প্রয়ােজনে বের হলে ই'তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর ই'তিকাফকারী মসজিদ থেকে বের হওয়ার জন্য প্রয়ােজন বা ওযর দু'ধরনের-
১. স্বভাবজাত প্রয়ােজন। যা মসজিদে করা যায় না। যেমন পায়খানা-প্রস্রাব, ওযূ' এবং গােসল ফরজ হলে গােসল করার জন্য বের হওয়া।
২. শরঈ প্রয়ােজন। ঈদ বা জুমুআর নামাযের জন্য বের হওয়া। এ দু'ধরনের প্রয়ােজন ব্যতীত যখন-তখন গােসল করার জন্য ই'তিকাফকারী মসজিদ থেকে বের হবে না। হ্যা, ই'তিকাফকারী নিয়মিত গােসল না করলে যদি অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে প্রয়ােজনে গােসল করতে বের হতে পারবে, তখন তা স্বভাবজাত প্রয়ােজন হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু বিনা প্রয়ােজনে যখন-তখন গােসল করতে বের হবে না। এটাই শরীয়তের ফায়সালা। কিতাবুল ফিক্হ ‘আলাল মাযাহিবিল আরবাআ ইত্যাদি। 

▪ প্রশ্নঃ খতমে তারাভীহ না পড়লে কি গোনাহ হবে?

🖋উত্তর ঃ রমজান মাসে তারাভীহ’র নামাযে কোরআন মজীদ একবার খতম করা সুন্নাত। অলসতার কারণে তারাভীহ’র নামাযে কোরআন শরীফ খতম যেন ছেড়ে না দেয় সে ব্যাপারে, ফিক্বহবিদ ও শরীয়তের ইমামগণ হুশিয়ার ও সতর্ক করে দিয়েছেন। যেমন ‘শরহে বেকায়া’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “রমজান মাসে নামাযে তারাভীহ’র মাধ্যমে পবিত্র কোরআন একবার খতম করা সুন্নাত এবং তা যেন মুসল্লীদের অলসতার দরুন ছেড়ে দেয়া না হয়।” হেদায়া নামক কিতাবেও উপরােক্ত উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়েছে। (শরহে বেকায়া, কিতাবুস সালাত, পৃষ্ঠা ২০০৫) তবে উপযুক্ত ভাল হাফেজে কোরআন যদি কোন মহল্লায় পাওয়া না যায় তবে উপযুক্ত একজন ইমাম দ্বারা অবশ্যই সূরা তারাভীহ আদায় করবে। কিন্তু অলসতার দরুণ খতমে তারাভীহ পরিত্যাগ করলে অবশ্যই গুনাহগার হবে। 

▪ প্রশ্নঃ রােযা রাখা অবস্থায় গান শুনা, গীবত করা, জুয়া ইত্যাদি পাপাচারে কি রোজা ভঙ্গ হবে?

📌মুহাম্মদ ইকবাল হােসেন | মরিয়ম নগর, রাঙ্গুনীয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন ঃ রােযা রাখা অবস্থায় গান শুনা, গীবত করা, জুয়া খেলা, ঝগড়া করা, গালি-গালাজ ইত্যাদি করলে রােযার কতটুকু ক্ষতি হবে জানালে খুশি হব।

🖋উত্তর ঃ যে সব কাজ রােযার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের পরিপন্থি, রােযা অবস্থায় ওই রূপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোর তাগিদ দিয়েছেন। যেমনঃ“সুতরাং রােযা অবস্থায় তােমাদের কেউ যেন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হয় তবে সে যেন বলে, আমি রােযাদার। -(বুখারী ও মুসলিম) হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাে এরশাদ করেছেন- “যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও তদানুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি তার এ পানাহার পরিত্যাগ করা আল্লাহর কোন প্রয়ােজন নেই।” সুতরাং, রােযা অবস্থায় গান শুনা, গীবত করা, জুয়া খেলা, ঝগড়া বিবাদ করা ও গালি-গালাজ ইত্যাদি অশ্লীল অপকর্ম করা রােযার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থি। সুতরাং কোরআন-সুন্নাহর আলােকে রােযা অবস্থায় উপরিউক্ত কুকর্ম ও গর্হিতকাজসমূহকে ফুক্বাহ-ই কিরাম হারাম, মারাত্মক অপরাধ ও রােযার জন্য হুমকি স্বরূপ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এসব অপকর্ম করে সিয়াম সাধনা প্রকৃত অর্থে উপবাস থাকার নামান্তর। তাই রােযার কাঙ্খিত ফলাফল হাসিল করার জন্য এ সব অশ্লীল ও শরীয়ত বিরােধী কাজ পরিত্যাগ করার সাথে সাথে অন্যান্য নেক আমলের প্রতি ও বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে। সুতরাং রােযাদার ব্যক্তিকে ইবাদত, তিলাওয়াত, যিকর ও তাসবীহে মগ্ন থেকে অন্যের প্রতি সহানুভূতি, সদয় আচরণ, দানশীলতা ও বদান্যতার মাধ্যমে আল্লাহ ও রসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের পথ প্রশস্ত করার প্রতি যত্নবান হতে হবে। কারণ, রমজান হচ্ছে তিলাওয়াত, যিকর এবং আল্লাহ ও রসূলের নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মৌসুম। আত্মিক উৎকর্ষ ও পরকালীন কল্যাণ লাভের এক বেহেশতী সওগাত এ রমজান মাস। (মিশকাত, সহীহ বােখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফ ইত্যাদি)

▪ প্রশ্নঃ আমি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। পর্দার বিধান সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক।

উত্তর ঃ একজন স্বাধীন মহিলার মুখমণ্ডল, দু’হাতের তালু ও দু'পায়ের পাতা ব্যতীত সমস্ত শরীর সতরের অন্তর্ভূক্ত। তা’ ঢেকে রাখা তাে ফরজ আর যখন প্রয়ােজনে বাইরে যেতেই হয় তখন পর্দা অবলম্বন করাও ফরজ। আর তা হল, লম্বা চাদর, মাথার উপর থেকে মুখমণ্ডলের সামনে ঝুলিয়ে নেয়া, যাতে পর পুরুষের দৃষ্টি মুখমণ্ডলের উপর না পড়ে। সুতরাং, মুখমণ্ডল ও হাতের তালু সতরের অন্তর্ভূক্ত না হলেও ফিতনার আশঙ্কায় এগুলাে আবৃত করাও জরুরী। ক্লাস রুম বা স্বীয় কক্ষে ভীষণ গরম ও ক্লান্তির কারণে পরপুরুষের আনাগােনা না থাকলে স্বীয় সতর আবৃত করে বােরকার উপরিভাগ নেহায়ত অস্থিরতা বােধ করলে খুলতে পারে। তবে বেগানা বা পরপুরুষের সামনে চেহারা যেন উন্মুক্ত না হয় সেদিকে একজন বালেগা রমনী অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে। বােরকা বা মাথার ওপর চাদর ব্যবহার করা ঘর থেকে বিশেষ প্রয়ােজনে বাইরে যাওয়ার সময় বালেগা রমণীর জন্য ফরজ।
[আসাহহুস সিয়র ও ফতােয়ায়ে হিন্দিয়া ইত্যাদি।]

▪ প্রশ্নঃ পূর্ণ এক মাস রােযা রাখার জন্য মহিলাদের ওষুধ খেয়ে হায়েজ বন্ধ করলে কি ঐদিনগুলো রোজা রাখা ওয়াজিব?

📌 এ মুসাম্মৎ আদীদা হুসনা জেসি | দৈলারপাড়া, কুতুবজুম, মহেশখালী, কক্সবাজার
প্রশ্ন ঃ পূর্ণ এক মাস রােযা রাখার জন্য মহিলাদের অনেকে ট্যাবলেট খেয়ে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখেন। কিন্তু আমি শুনেছি এভাবে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখলে নাকি নামায-রােযা হয় না। এ কথা কতটুকু সত্য, দয়া করে জানাবেন।

🖋 উত্তর ঃ কৃত্রিম ঔষধ সেবনের মাধ্যমে যদি ঋতুস্রাব বন্ধ রাখা হয়, আর স্রাব না হওয়াতে তা পবিত্রতার সময় হিসেবেই ধরা হবে। ঐ সময় নামায রােযা পালন করলে তা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু এভাবে ঔষধের মাধ্যমে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখা অনুচিত, স্বীয় শরীরের উপর জুলুমের শামিল। এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে; তদুপরি এটা আল্লাহ প্রদত্ত স্বাভাবিক নিয়মের উপর হস্তক্ষেপের নামান্তর। যেহেতু ঋতুস্রাবকালে আল্লাহ নারীদের জন্য শরীয়তের বিধান পালনে সহজ করে দিয়েছেন, সেহেতু নামায- রােযা পালনে অতি উৎসাহি হয়ে তা বন্ধ করা অনুচিত।

▪ সামনের কাতারে দাঁড়ালে কি বেশি সওয়াব হয়?

📌✉ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
মুহুরী পাড়া, উত্তর আগ্রাবাদ।
প্রশ্ন ঃ

১. আমি এক আলেমের কাছে শুনেছি মসজিদে জামায়াতের সময় প্রথম কাতারে দাঁড়ালে সওয়াব বেশী হয় এবং দ্বিতীয় কাতারে দাঁড়ালে প্রথম কাতারের তুলনায় সওয়াব কম এভাবে ক্রমাগত সওয়াব কমতে থাকে। এখন আমার প্রশ্ন হল, মসজিদে দ্বিতীয় তলার প্রথম কাতারকে কি প্রথম কাতার ধরা হবে নাকি এভাবে ক্রমাগত পেছনের কাতার ধরা হবে?

২. আমার জানামতে রমজান মাসের রােজা শুরু হয় সুবহে সাদিক থেকে এবং শেষ হয় সূর্যাস্তের সাথে সাথে সাধারণত রমজান মাসে ফজরের আযান দেয়া হয় সুবহে সাদিকের আগে। আমার প্রশ্ন যদি আযানের পর এবং সুবহে সাদিকের আগে যদি খাবার খায় | তাহলে রােজা রাখা সঠিক হবে?

🖋উত্তর ঃ
১ম. নামাযের জমাতে ১ম কাতার হল যা ইমাম সাহেবের নিকটবর্তী অতপর দ্বিতীয়, তৃতীয় ইত্যাদি কাতারসমূহ গণনা হবে, সুতরাং নিচের তলার শেষ কাতারের পর দ্বিতীয় তলার প্রথম কাতার হবে পরবর্তী কাতার, প্রথম কাতার নয়। অতএব কাতার সমূহের ফযিলত ইমাম সাহেবের পার্শ্ববর্তী কাতার থেকে সূচনা হবে।
(আলমগীরি ও বাহারে শরীয়ত ইত্যাদি)

২য়. শরিয়তের দৃষ্টিতে রােজা শুরু হয় সুবহে সাদেক থেকে সুবহে সাদেকের আগ মুহুহ পর্যন্ত হল সেহেরী গ্রহণের সময়। যতক্ষণ পর্যন্ত সুবহে সাদিক হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত ফজরের আযান দেওয়া সঠিক ও বৈধ হবে না। এবং ওয়াক্তের পূর্বে আযান দেওয়া হলে তা পুনরায় দিতে হবে। অতএব সুবহে সাদেকের আগে আযান দেওয়া হলে এমতাবস্থায় কেহ সেহেরি খাওয়াতে রত থাকলে তার সেহেরী খাওয়া শুদ্ধ হবে। রােজাতে কোন অসুবিধা হবে না; বরং যে অগ্রিম আযান দিয়েছে সে গুনাহগার হবে। তাই এ রকম ওয়াক্তের পূর্বে আযান দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।
কিতাবুল ফিকহ আলাল মাজাহিবিল আরবায়া এবং শরহে বেকায়া ইত্যাদি।

▪ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সোমবার রোজা রাখার মূল উদ্দেশ্য কি?


🖋জবাবঃ "এ দিবসেই আমি দুনিয়াতে এসেছি এবং এই দিনেই আমার উপর ক্বোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।" [ মুসলিম শরীফ, বাবু ইসতিহবাবিস সিয়ামি সালাসাতি আইয়্যামিন মিনকুল্লি শাহরিন ওয়া সাওমে ইউমি আরাফা ওয়া আশুরা, ওয়াল ইসনাইন ওয়াল খামিস, হাদিস নং-১৯৭৮]
মূলত: মিলাদকে উপলক্ষ করেই নবীজি রােযা পালনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর শােকর আদায় করতেন। সুতরাং ১২ রবিউল আউয়াল তথা মিলাদুন্নবীর দিবসে রােযা রাখা দান-খয়রাত করা, মিলাদ-কিয়াম, দরূদ-সালাম, তাবাররুকাত ইদ্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে শােকরিয়া আদায় করা এবং প্রিয়নবী রসূলে আকরম সাল্লাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান প্রদর্শণ করা অনেক ফজিলত ও পূণ্যময়।
(আন-নিমাতুল কুবরা, কৃত: ইমাম ইবনে হাজর হাইতমী মক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি; আল হাভী লিল ফাতাওয়া, কৃত: ইমাম জালালুদ্দী সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি; মাওয়াহেবে লাদুনিয়া, কৃত:
ইমাম আহমদ কস্তুলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি।






Post a Comment

نموذج الاتصال