প্রিয়,,
মুসলিম ভাই ও বোনেরা আস-সালামু আলাইকুম ওয়া-রাহমাতুল্লাহি ওয়া-বারাকাতু; : ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ; আমরা প্রতিদিন সবাই গোসল করে থাকি। কিন্তু উওম রূপে গোসল করার নিয়ম হয়ত অনেকেই জানি না। তাই আজকে হানাফি মাযহাবের মতে গোসল সংক্রান্ত সকল তথ্য উপস্হাপন করা হল,,,
এক: গোসলের পদ্ধতি
গোসলের পদ্ধতি
দরূদ শরীফের ফযীলত
খাতামুল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, শফীউল মুযনীবিন, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: “তোমরা অধিক হারে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করো, নিশ্চয় এটা তোমাদের জন্য পবিত্রতা।” (মুসনাদে আবি ইয়ালা, ৫ম খন্ড, ৪৫৮ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৬৩৮৩)
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
অনুপম শাস্তি
হযরত সায়্যিদুনা জুনাইদ বাগদাদী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: ইবনুল কুরাইবী رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বর্ণনা করেন; একবার আমার স্বপ্নদোষ হলো, আমি তখন গোসল করার ইচ্ছা পোষণ করলাম। প্রচন্ড শীতের রাত ছিলো। তাই আমার নফস আমাকে পরামর্শ দিলো: “এখনও রাতের অনেকাংশ বাকী আছে, এত তাড়াতাড়ি করার কী প্রয়োজন? সকালে প্রশান্ত মনে গোসল করে নিতে পারবে।”
আমি তাড়াতাড়ি আমার নফসকে একটি অনুপম শাস্তি দেয়ার শপথ করলাম। তা হলো: আমি প্রচন্ড শীতের মধ্যেই কাপড় সহ গোসল করব এবং গোসল করার পর কাপড় না নিংড়িয়ে ভিজা কাপড়েই থাকব এবং শরীরেই সে ভিজা কাপড় শুকাব, বাস্তবে আমি তাই করলাম। যে দুষ্ট নফস আল্লাহ্ তাআলার কাজে অলসতা করার জন্য প্ররোচনা দিয়ে থাকে তার এরূপ শাস্তিই হয়ে থাকে। (কিমিআয়ে সাআদাত, ২য় খন্ড, ৮৯২ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হোক। اٰمِين بِجا هِ النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم اٰمِين بِجا هِ النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
নিহংগ ওয়াজিদহা মারা আগর ছে শের নর মারা,
বড়ে মওজি কো মারা নফসে আম্মারা কো গর মারা।
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তো! আমাদের পূর্ববর্তী বুযুর্গরা তাঁদের নফসের ধোঁকাবাজীকে দমন করার জন্য কত বড় বড় কষ্ট সহ্য করেছিলেন। বর্ণিত ঘটনা থেকে সে সকল ইসলামী ভাইদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, যারা রাতে স্বপ্নদোষ হওয়ার পর পরকালের ভয়ানক লজ্জাকে ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের লজ্জায় বা অলসতার কারণে গোসল থেকে বিরত থেকে ফযরের নামাযের জামাআত নষ্ট করে। এমনকি আল্লাহর পানাহ! নামায পর্যন্তও কাযা করে ফেলে। যখন কোন কারণে গোসল ফরয হবে তখনই আমাদের গোসল করে নেয়া উচিত। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে: “ফিরিশতারা সে ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে ছবি, কুকুর ও জুনুবী ব্যক্তি (অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যার উপর স্ত্রী সহবাস বা স্বপ্নদোষ বা যৌন উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হওয়ার কারণে গোসল ফরয হয়েছে) রয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ, ১ম খন্ড, ১০৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-২২৭)
গোসলের পদ্ধতি
মুখে উচ্চারণ না করে প্রথমে মনে মনে এভাবে নিয়্যত করুন, আমি পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করছি। তারপর উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করুন। তারপর ইস্তিন্জার স্থান যদিও নাপাকী থাকুক বা না থাকুক, তারপর শরীরের কোথাও নাপাকী থাকলে তা দূরীভূত করুন। অতঃপর নামাযের অযুর মত অযু করুন। কিন্তু পা ধৌত করবেন না। তবে চৌকি ইত্যাদির উপর গোসল করলে পাও ধুয়ে নিন। অতঃপর শরীরে তৈলের ন্যায় পানি মালিশ করুন বিশেষ করে শীতকালে। (এই সময় শরীরে সাবানও মালিশ করতে পারবেন) অতঃপর তিনবার ডান কাঁধে, তিনবার বাম কাঁধে এবং তিনবার মাথা ও সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করুন। তারপর গোসলের স্থান থেকে সরে দাঁড়ান। অযু করার সময় যদি পা ধুয়ে না থাকেন তাহলে এখন পা ধুয়ে নিন। গোসল করার সময় কিবলামুখী হবেন না। হাত দ্বারা সমস্ত শরীর ভালভাবে মেজে নিন। এমন জায়গায় গোসল করা উচিত যেখানে কারো দৃষ্টি না পড়ে। যদি তা সম্ভব না হয় পুরুষেরা নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটি মোটা কাপড় দ্বারা সতর ঢেকে নেবে। আর মোটা কাপড় পাওয়া না গেলে প্রয়োজনানুসারে দুইটি বা তিনটি কাপড় দ্বারা সতর ঢেকে নেবে। কেননা, গোসল করার সময় পরনে পাতলা কাপড় থাকলে পানি পড়ার সাথে সাথে তা শরীরের সাথে লেগে যায় এবং আল্লাহ্র পানাহ! হাঁটু, উরু ইত্যাদির আকৃতি প্রকাশ পায়। মহিলাদের জন্য তো সতর ঢাকার ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। গোসল করার সময় কোন রকম কথাবার্তা বলবেন না এবং কোন দোয়াও পড়বেন না। গোসলের পর তোয়ালে, গামছা ইত্যাদি দ্বারা শরীর মুছতে কোন অসুবিধা নেই। গোসলের পর তাড়াতাড়ি কাপড় পরিধান করে নিন এবং মাকরূহ সময় না হলে গোসলের পর দু’রাকাত নফল নামায আদায় করা মুস্তাহাব। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৪ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা)
গোসলের ফরয তিনটি
(১) কুলি করা, (২) নাকে পানি দেয়া, (৩) সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৩ পৃষ্ঠা)
(১) কুলি করা
মুখে সামান্য পানি নিয়ে সামান্য নড়াচড়া করে ফেলে দেয়ার নাম কুলি নয়। বরং মুখের ভিতরের প্রতিটি অংশে, প্রান্তে ও ঠোঁট হতে কণ্ঠনালীর গোঁড়া পর্যন্ত প্রতিটি স্থানে পানি পৌঁছাতে হবে। একিভাবে চোয়ালের পিছনে, গালের ভিতরস্থ চামড়াতে, দাঁতের ছিদ্র ও গোঁড়াতে, জিহ্বার প্রত্যেক পিঠে এবং গলার গভীরেও পানি পৌঁছাতে হবে। রোযা অবস্থায় না থাকলে গড়গড়া করাও সুন্নাত। দাঁতের ফাঁকে সুপারির দানা, বিচির খোসা ইত্যাদি আটকে থাকলে তা বের করে ফেলা আবশ্যক। তবে বের করে নেয়াতে যদি ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, তাহলে মাফ। গোসলের পূর্বে দাঁতের ছিদ্রে খোসা ইত্যাদি অনুভূত না হওয়ার কারণে তা নিয়েই নামায আদায় করা হলো কিন্তু নামায আদায়ের পর তা অনুভূত হলো, তাহলে তা বের করে সেখানে পানি পৌঁছানো ফরয। তবে ঐগুলো দাঁতের ফাঁকে থাকা অবস্থায় পূর্বে যে নামায আদায় করা হয়েছিল তা শুদ্ধ হয়ে যাবে। যে পরা দাঁত বিভিন্ন উপাদান দ্বারা জমানো হয়েছিল বা তার দ্বারা বাঁধানো হয়েছিল কুলি করার সময় ঐ উপাদান বা তারের নিচে পানি না পৌঁছলেও মাফ। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১ম খন্ড, ৪৩৯-৪৪০ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩১৬ পৃষ্ঠা) গোসলে যে ভাবে একবার কুলি করা ফরয, অযুতে সে ভাবে তিনবার কুলি করা সুন্নাত।
(২) নাকে পানি দেওয়া
তাড়াতাড়ি নাকের মাথায় সামান্য পানি লাগিয়ে নিলে নাকে পানি দেয়া বলা যায় না বরং নাকের ভিতর যতটুকু নরম জায়গা আছে তাতে এবং শক্ত হাঁড়ের শুরু পর্যন্ত পানি পৌঁছানো আবশ্যক। আর সেটা এইভাবে হতে পারে যে, নাকে পানি নিয়ে নিঃশ্বাস টেনে উপরে নিয়েই নাকের সম্পূর্ণ স্থানে পানি পৌঁছানো। এটা স্মরণ রাখবেন! নাকের ভিতর চুল পরিমাণ স্থানও যাতে অধৌত থেকে না যায়। অন্যথায় গোসল আদায় হবে না। নাকের ভিতর যদি শ্লেষ্মা শুকিয়ে যায়, তাহলে তা বের করে নেয়া ফরয। নাকের ভিতরের লোমগুলোও ধৌত করা ফরয। (বাহারে শরীয়াত, ৪৪২-৪৪৩ পৃষ্ঠা)
(৩) সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা
মাথার চুল থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীরে প্রতিটি অংশে এবং প্রতিটি লোমে পানি প্রবাহিত করা আবশ্যক। শরীরে কিছু স্থান এমনও আছে যেগুলোতে সতর্কতার সাথে পানি পৌঁছানো না হলে তা শুষ্ক থেকে যায় ফলে গোসল আদায় হয় না। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩১৭ পৃষ্ঠা)
গোসলের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য ২১টি সতর্কতা
❃পুরুষের মাথার চুল যদি বেনী বাঁধা হয়, তাহলে তা খুলে চুলের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ফরয। ❃ মহিলাদের জন্য শুধুমাত্র চুলের গোঁড়া ভিজিয়ে নেয়া আবশ্যক। চুলের খোঁপা বা বেনী খোলার প্রয়োজন নেই। তবে খোঁপা যদি এমন শক্তভাবে বাধা হয় যে, তা খোলা ব্যতীত চুলের গোঁড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছানো অসম্ভব, তাহলে খোঁপা খুলে নিতে হবে। ❃যদি কানের দুল এবং নাকের ফুলের ছিদ্র থাকে এবং সেটা যদি বন্ধ না থাকে, তাহলে তাতে পানি পৌছানো ফরয। অযুতে শুধু নাকের ফুলের ছিদ্রে এবং গোসলে নাক ও কান উভয়ের ছিদ্রে পানি প্রবাহিত করুন। ❃ ভ্রু, গোঁফ ও দাঁড়ির প্রত্যেক লোমের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত এবং ঐগুলোর নিচের চামড়া ধৌত করা আবশ্যক। ❃কানের প্রত্যেক অংশ এবং কানের ছিদ্রের মুখ ধৌত করতে হবে, ❃কানের পিছনের চুল থাকলে তা সরিয়ে সেখানে পানি পৌঁছাতে হবে। ❃চিবুক ও গলার সংযোগস্থলে চেহারা উত্তোলন করেই ধৌত করতে হবে, ❃ উভয় হাত ভালভাবে উত্তোলন করেই বগল ধৌত করতে হবে, ❃ বাহুর প্রত্যেক পার্শ্ব ধৌত করতে হবে, ❃ পিঠের প্রতিটি অংশ ধৌত করতে হবে, ❃ পেটের ভাঁজ উঠিয়েই পেট ধৌত করতে হবে, ❃ নাভীতেও পানি পৌঁছাতে হবে, যদি নাভিতে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে নাভিতে আঙ্গুল ঢুকিয়েই নাভি ধৌত করতে হবে, ❃ শরীরের প্রতিটি লোম গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত ধৌত করতে হবে, ❃ উরু ও তল পেটের সংযোগস্থল ধৌত করতে হবে, ❃ বসে গোসল করলে উরু ও গোড়ালীর সংযোগ স্থল ধৌত করার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, ❃ বিশেষ করে দাঁড়িয়ে গোসল করার সময় উভয় নিতম্বের সংযোগস্থলে পানি পৌঁছানোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে, ❃ উরুর মাংসল গোলাকার অংশে এবং ❃ গোড়ালীর গোলাকার অংশে পানি প্রবাহিত করতে হবে, ❃ পুরুষাঙ্গ ও অন্ডকোষের নিম্নাংশ পর্যন্ত এবং ❃ অন্ডকোষের নিচের স্থান সমূহ গোড়া পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। ❃ যার খতনা করা হয়নি তার পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া যদি উপর দিকে উত্তোলন করা যায়, তাহলে চামড়া উপর দিকে উত্তোলন করেই পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ ধৌত করতে হবে এবং পুরুষাঙ্গের চামড়ার ভিতরও পানি পৌঁছাতে হবে। (সংক্ষেপিত বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩১৭-৩১৮ পৃষ্ঠা)
(পর্দানশীন) মহিলাদের জন্য ৬টি সতর্কতা
(১) ঝুলন্ত স্তনদ্বয়কে উত্তোলন করেই সেখানে পানি প্রবাহিত করতে হবে, (২) স্তন ও পেটের সংযোগ রেখা ধৌত করতে হবে, (৩) যোনির বাইরের প্রতিটি অংশ, প্রতিটি পার্শ্বের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ভালভাবে ধৌত করতে হবে, (৪) যোনির ভিতরে আঙ্গুল ঢুকিয়ে তা ধৌত করা ফরয নয় বরং মুস্তাহাব। (৫) হায়েজ ও নিফাসের রক্ত বন্ধ হওয়ার পর গোসল করলে একটি পুরাতন কাপড় দ্বারা যোনি পথের ভিতর থেকে রক্তের চিহ্ন পরিস্কার করে নেয়া মুস্তাহাব। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩১৮ পৃষ্ঠা) (৬) যদি নখপালিশ নখের সাথে লেগে থাকে তা নখ থেকে ছাড়িয়ে নেয়া ফরয নতুবা গোসল আদায় হবে না। তবে মেহেদীর রং থাকলে তাতে কোন অসুবিধা নেই।
ক্ষতস্থানের ব্যান্ডেজ
ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ, পট্টি ইত্যাদি বাঁধা থাকলে এবং তা খুলতে গেলে ক্ষতি বা অসুবিধার সম্ভাবনা থাকলে গোসল করার সময় পট্টি বা ব্যান্ডেজের উপরই মাসেহ করলে যথেষ্ট হবে। অনুরূপ শরীরে কোন স্থানে রোগ বা ব্যথার কারণে পানি প্রবাহিত করা ক্ষতিকর হলে সে স্থানের সম্পূর্ণ অঙ্গেই মাসেহ করে নিবে। পট্টি বা ব্যান্ডেজ প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্থান বেষ্টন করে বাঁধা উচিত নয়। কেননা, তাতে মাসেহ শুদ্ধ হবে না। যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্থান বেষ্টন করে পট্টি বাঁধা ছাড়া উপায় না থাকে, যেমন বাহুতে আঘাত প্রাপ্ত হলো কিন্তু গোলাকার করেই বাহুতে পট্টি বাঁধা হলো, ফলে বাহুর অক্ষত অংশও পট্টির আওতায় চলে এল এবং পট্টি দ্বারা আবৃত হয়ে পড়ল, এমতাবস্থায় পট্টি খোলা যদি সম্ভবপর হয় তাহলে পট্টি খোলেই সে অক্ষতস্থান ধৌত করা ফরয। আর যদি পট্টি খোলা অসম্ভব হয় বা সম্ভব হলেও পুনরায় সে রকম করে বাঁধা অসম্ভব হয় এবং তাতে ক্ষতস্থানের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তাহলে সম্পূর্ণ পট্টির উপরই মাসেহ করলে চলবে। শরীরের সে অক্ষত অংশও আর ধৌত করতে হবে না। (প্রাগুক্ত, ৩১৮ পৃষ্ঠা)
গোসল ফরয হওয়ার পাঁচটি কারণ
(১) যৌন উত্তেজনার ফলে বীর্য স্বস্থান থেকে পুরুষাঙ্গ বা যোনিপথ দিয়ে বের হলে। (২) স্বপ্নদোষ হলে অর্থাৎ ঘুমন্ত অবস্থায় বীর্যপাত হলে। (৩) মহিলার যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ তথা কর্তিত অংশ প্রবেশ করালে। কামোত্তেজনা বশত হোক বা না হোক এবং বীর্যপাত হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় উভয়ের উপর গোসল ফরয। (৪) হায়েজ তথা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর, (৫) নিফাস তথা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যে রক্ত বের হয় তা বন্ধ হওয়ার পর। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২১-৩২৪ পৃষ্ঠা)
নিফাসের প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা
অধিকাংশ মহিলাদের মধ্যে এটা প্রসিদ্ধ যে, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মহিলারা চল্লিশ দিন পর্যন্ত আবশ্যিকভাবে অপবিত্র থাকে। এটা সম্পূর্ণ ভুল, বিস্তারিত ব্যাখ্যা লক্ষ্য করুন: সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মহিলাদের যে রক্ত বের হয় তাকে নিফাস বলে। এর সর্বোচ্চ সময়সীমা চল্লিশ দিন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার চল্লিশ দিন পরও যদি ঐ রক্ত দেখা যায় তাহলে তা রোগ হিসেবে বিবেচিত হবে। সুতরাং চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথেই মহিলাদেরকে গোসল করে পাক পবিত্র হতে হবে। আর যদি চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই ঐ রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, চাই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার এক মিনিট পরেই বন্ধ হোক না কেন, বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই গোসল করে নিতে হবে এবং নামায রোযা যথারীতি পালন করতে হবে। আর যদি চল্লিশ দিনের ভিতরে রক্ত একবার বন্ধ হয়ে পুনরায় আবার দেখা যায়, তাহলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে শেষ রক্ত বন্ধ হওয়ার সময় পর্যন্ত সম্পূর্ণ সময়ই নিফাসের সময়সীমাতে গণ্য হবে। যেমন সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দুই মিনিট পর্যন্ত রক্ত দেখা গিয়েছিল তারপর বন্ধ হয়ে গেলো এবং সন্তানের মা গোসল করে পবিত্র হয়ে নামায-রোযা ইত্যাদি যথারীতি পালন করতে লাগলো। চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার মাত্র দুই মিনিট বাকী ছিলো পুনরায় আবার রক্ত দেখা গেলো, তাহলে পূর্ণ চল্লিশ দিনই নিফাসের সময়সীমাতে গণ্য হবে এবং চল্লিশ দিন যাবৎ যে নামায রোযা পালন করা হয়েছিল তা সবই বৃথা যাবে। সে সময়ের মধ্যে উক্ত মহিলা কোন ফরয বা ওয়াজীব নামায বা রোযা কাযা দিয়ে থাকলে তা পুনরায় আদায় করে দিতে হবে। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া হতে সংকলিত, ৪র্থ খন্ড, ৩৫৪-৩৫৬ পৃষ্ঠা)
পাঁচটি প্রয়োজনীয় মাসয়ালা
(১) যৌন উত্তেজনার কারণে বীর্য স্বস্থান ত্যাগ করে বের হয়নি বরং ভারী বোঝা উঠানোর কারণে বা উঁচু স্থান থেকে নামার কারণে বা মলত্যাগের জন্য জোর দেয়ার কারণে বীর্য বের হলো, গোসল ফরয হবে না কিন্তু অযু ভেঙ্গে যাবে। (২) যদি যৌন উত্তেজনা ব্যতীত এমনিতেই বীর্যের ফোঁটা পড়ে যায় এবং প্রস্রাবের সময় বা যে কোন সময় উত্তেজনা ব্যতীত এমনিতেই তার বীর্যের ফোঁটা বের হয়ে থাকে, তাহলে গোসল ফরয হবে না কিন্তু অযু ভেঙ্গে যাবে। (৩) যদি স্বপ্ন দোষ হওয়ার কথা মনে আছে কিন্তু এর কোন চিহ্ন কাপড় ইত্যাদিতে দেখা গেলো না, গোসল ফরয হবে না। (৪) নামাযের মধ্যে যৌন উত্তেজনার কারণে বীর্য স্বস্থান ত্যাগ করতে অনুভব হলো কিন্তু বের হওয়ার পূর্বেই নামায শেষ করে ফেলল, নামায শেষ করার পর বীর্য বের হলো। নামায হয়ে যাবে কিন্তু তার উপর গোসল ফরয হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২১-৩২২ পৃষ্ঠা) (৫) হস্ত মৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটালে গোসল ফরয হয়। হস্তমৈথুন করা একটি গুনাহের কাজ। হাদীস শরীফে হস্ত মৈথুনকারীকে মালাঊন (অভিশপ্ত) আখ্যায়িত করা হয়েছে। (আমালী ইবনে বুশরান, ২য় খন্ড, ৫ পৃষ্ঠা, নম্বর- ৪৭৭। হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিউল ফালাহ, ৯৬ পৃষ্ঠা) হস্ত মৈথুনের দ্বারা পুরুষত্ব দূর্বল হয়ে পড়ে, ফলে মানুষ বিবাহের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে এবং বিবাহ করতে ভয় পায়।
হস্ত মৈথুনের শাস্তি
আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মাওলানা শাহ আহমদ রযা খাঁন رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এর খেদমতে আরয করা হলো: এক ব্যক্তি হস্ত মৈথুন করে, সে এই খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকে না। প্রত্যেকবার তাকে বুঝানো হয়েছে, এখন আপনি বলুন, তার হাশর কিরূপ হবে এবং তাকে সে অভ্যাস থেকে মুক্তি লাভের জন্য কি দোয়া পড়তে হবে?
আ’লা হযরতের জবাব: সে গুনাহগার ও অপরাধী। সে কাজ বারবার করার কারণে কবীরা গুনাহকারী এবং ফাসিক সাব্যস্ত হবে। হাশরের ময়দানে হস্ত মৈথুনকারীরা গর্ভিত হাত নিয়ে উঠবে। ফলে বিশাল জনসম্মুখে তাদের অপদস্ত হতে হবে। যদি তারা এ কাজ থেকে তাওবা না করে, আর আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা শাস্তিও দিতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমাও করে দিতে পারেন। এ অভ্যাস থেকে মুক্তি লাভের জন্য হস্ত মৈথুনকারী ব্যক্তিদের সর্বদা لَا حَوْل শরীফ পাঠ করা উচিত। যখন শয়তান তাদের এ খারাপ কাজের প্রতি প্ররোচিত করবে, তখন সাথে সাথে আল্লাহ তাআলার প্রতি ধ্যানমগ্ন হয়ে অধিকহারে لَا حَوْل শরীফ পাঠ করবে। সর্বদা পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। ফযরের নামাযের পর নিয়মিত সূরায়ে ইখলাস পাঠ করবে। وَ اللهُ تَعَالٰی اَعْلَمُ (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২৪৪ পৃষ্ঠা)
শাজরায়ে আত্তারীয়্যার ২১ পৃষ্ঠাতে উল্লেখ আছে: যে ব্যক্তি প্রতিদিন ফযরের নামাযের পর এগারবার সূরা ইখলাস পাঠ করবে, শয়তান তার সৈন্য সামন্ত দ্বারা গুনাহ করানোর শত চেষ্টা করলেও তার দ্বারা গুনাহ করাতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজ ইচ্ছায় গুনাহ না করে।
প্রবাহিত পানিতে গোসল করার পদ্ধতি
যদি প্রবাহিত পানি যেমন সমুদ্রের পানি, নদীর পানি ইত্যাদিতে গোসল করলে কিছুক্ষণ পানিতে ডুব দিয়ে থাকলে তিনবার ধৌত করা, ধারাবাহিক, অযু ইত্যাদি সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে, তিনবার ধৌত করার প্রয়োজন নেই। আর যদি পুকুর ইত্যাদির বদ্ধ পানিতে গোসল করা হয় তাহলে তিনবার ডুব দিলে বা তিনবার স্থান পরিবর্তন করলে তিনবার ধৌত করার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে।
রাসুলুল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেছেন: “যে ব্যক্তির নিকট আমার আলোচনা হলো আর সে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করলো না, তবে সে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ব্যক্তি।” (আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব)
বৃষ্টির পানিতে (নল বা ফোয়ারার নিচে দাঁড়ানো) প্রবাহিত পানির মধ্যে দাঁড়ানোর হুকুমের মতো। প্রবাহিত পানিতে অযু করলে কিছুক্ষণ অঙ্গ পানিতে ডুবিয়ে রাখলে তিনবার ধৌত করা হয়ে যাবে। আর স্থির পানিতে অযু করলে অঙ্গকে তিনবার পানিতে ডুবালে তিনবার ধৌত করার (সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে) । (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২০ পৃষ্ঠা) যেখানেই অযু বা গোসল করে থাকুক না কেন তাকে অবশ্যই কুলি করতে হবে এবং নাকে পানি দিতে হবে।
ফোয়ারা (প্রস্রবন) প্রবাহিত পানির হুকুমের অন্তর্ভূক্ত
ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাতে (অপ্রকাশিত) উল্লেখ আছে: ফোয়ারার (প্রস্রবনের) নিচে গোসল করা প্রবাহিত পানিতে গোসল করার মতো। সুতরাং অযু ও গোসল করতে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন হয় ততটুকু সময় পর্যন্ত ঝর্ণা ধারার নিচে অবস্থান করলে তিনবার ধৌত করার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। অতঃপর “দুররে মুখতার”এ উল্লেখ আছে: যদি কেউ প্রবাহিত পানিতে বা বড় হাউজে বা ঝর্ণাধারার নিচে অযু ও গোসল করার সময় পর্যন্ত অবস্থান করে তাহলে সে পূর্ণ সুন্নাত আদায় করল। (দুররে মুখতার, ১ম খন্ড, ৩২০ পৃষ্ঠা)
স্মরণ রাখবেন! গোসল এবং অযুতে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া আবশ্যক।
ফোয়ারাতে গোসল করার সময় সতর্কতা অবলম্বন
যদি আপনার ঘরের গোসল খানায় ফোয়ারা (SHOWER) থাকে, তাহলে ফোয়ারামুখী হয়ে উলঙ্গ অবস্থায় গোসল করার সময় ভালভাবে লক্ষ্য রাখবেন, যেন আপনার মুখ বা পিঠ কিবলার দিকে না থাকে। ইস্তিঞ্জাখানাতেও অনুরূপ সতর্কতা অবলম্বন করবেন। কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ থাকার অর্থ হলো ফোয়ারার ৪৫০ ডিগ্রী কোণের ভিতরে গোসল করা, সুতরাং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেন ফোয়ারার ৪৫০ ডিগ্রী কোণের বাইরে থেকে গোসল করা না হয়। অনেক লোক এ মাসয়ালা সম্পর্কে অজ্ঞ।
W.C কমোট (ওয়াটার ক্লজেট) এর দিক ঠিক করে নিন
দয়া করে নিজ ঘরের W.C কমোট ও ফোয়ারার দিক যদি তা ভুল স্থাপিত হয়, তাহলে তা সংশোধন করে নিন। সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বনের পন্থা হলো, W.C কমোট এর মুখ কিবলার দিক হতে ৯০০ ডিগ্রী কোনে স্থাপন করা অর্থাৎ যেদিকে নামাযে সালাম ফিরানো হয় সেদিকে স্থাপন করা। রাজ মিস্ত্রিরা সাধারণত নির্মাণের সহজতা ও মানান সইয়ের জন্য কিবলার আদবের প্রতি তোয়াক্কা করে না। মুসলমানদের ঘর নির্মানের সময় ঘরের অনাবশ্যক চাকচিক্যের পরিবর্তে পরকালের প্রকৃত সৌন্দর্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে ঘর নির্মাণ করা উচিত।
কুছ নেকীয়া কামালে জল্দ্ আখিরাত বানালে,
ভাই নেহী ভরোসা হ্যা কুয়ি জিন্দেগী কা।
দুই: গোসলের কিছু জররী বিষয়,
কখন গোসল করা সুন্নাত
জুমার দিন, ঈদুল ফিতরের দিন, ঈদুল আযহার দিন, ৯ই জিলহজ্জ আরাফার দিন এবং ইহরাম বাধার সময় গোসল করা সুন্নাত। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ১৬ পৃষ্ঠা)
কখন গোসল করা মুস্তাহাব
(১) আরাফায় অবস্থানের জন্য, (২) মুযদালিফায় অবস্থানের জন্য, (৩) হেরম শরীফে প্রবেশ করার জন্য, (৪) নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আমীন صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর রওজা মোবারক যিয়ারতের জন্য, (৫) তাওয়াফ করার জন্য, (৬) মিনাতে প্রবেশ করার জন্য, (৭) (১০, ১১ ও ১২ই জিলহজ্জ) জমরাতে কংকর নিক্ষেপের জন্য, (৮) কদরের রাতে, (৯) বরাতের রাতে, (১০) আরাফার রাতে, (১১) , মীলাদ শরীফের মাহফিলে অংশগ্রহণ করার জন্য, (১২) অন্যান্য মাহফিলে অংশগ্রহণ করার জন্য, (১৩) মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পর, (১৪) পাগল ব্যক্তি পাগলামী মুক্ত হওয়ার পর, (১৫) অজ্ঞান অবস্থা থেকে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর, (১৬) মাতলামী থেকে মুক্তি লাভের পর, (১৭) গুনাহ থেকে তাওবা করার জন্য, (১৮) নতুন কাপড় পরিধান করার জন্য, (১৯) সফর থেকে ফিরে আসার পর, (২০) ইস্তিহাজার রক্ত বন্ধ হওয়ার পর, (২১) চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের নামাযের জন্য, (২২) ইস্তিস্কা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামায আদায়ের জন্য, (২৩) ভয়ভীতি, ভীষণ অন্ধকার ও তীব্র বাতাস প্রবাহ থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে নামায আদায়ের জন্য, (২৪) শরীরে কোন স্থানে নাপাকী লেগেছে তা সঠিক জানা না থাকলে।
(দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ১ম খন্ড, ৩৪১-৩৪৩ পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৪-৩২৫ পৃষ্ঠা)
একটি গোসলে কয়েকটি নিয়্যত
যার উপর কয়েকটি গোসল সম্পাদন করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে, যেমন-কারো স্বপ্নদোষ হলো, আবার ঈদ ও জুমার দিনও, তাহলে সে তিনটি গোসলের নিয়্যত করে একটি গোসল সম্পাদন করলে তার তিনটি গোসলই আদায় হয়ে যাবে এবং তিনটি গোসলেরই সাওয়াব পাবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৫ পৃষ্ঠা)
বৃষ্টির পানিতে গোসল
মানুষের সামনে সতর খুলে গোসল করা হারাম। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংগ্রহীত) , ৩য় খন্ড, ৩০৬ পৃষ্ঠা) বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে পায়জামা বা সালওয়ারের উপর অতিরিক্ত একটি মোটা চাঁদর জড়িয়ে নিন, যাতে পায়জামা বা সালওয়ার পানিতে ভিজে শরীরের সাথে লেগে গেলেও উরু ইত্যাদির আকৃতি যেন স্পষ্ট না হয়ে ওঠে।
চিপচিপে পোষাক পরিহিত ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করা কেমন?
পোশাক চিপচিপে হওয়ার কারণে বা তীব্র বাতাস প্রবাহের কারণে বা বৃষ্টির পানিতে গোসল করার কারণে বা নদী বা সমুদ্রে গোসল করার সময় নদী বা সমুদ্রের প্রবল ঢেউয়ের কারণে যদিও সে মোটা কাপড় পরিধান করে গোসল করে থাকুক না কেন কাপড় যদি শরীরের সাথে লেগে গিয়ে সতরের কোন একটি পূর্ণ অঙ্গ যেমন উরুর সম্পূর্ণ গোলাকার অংশের আকৃতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তাহলে সে অঙ্গের দিকে অন্যান্য লোকদের দৃষ্টিপাত করা জায়িয নেই। অনুরূপ চিপচিপে পোশাক পরিধানকারী ব্যক্তির সতরের স্পষ্ট হয়ে ওঠা পূর্ণ অঙ্গের প্রতিও দৃষ্টিপাত করা (জায়িয নেই) ।
উলঙ্গ অবস্থায় গোসল করার সময় খুব সাবধানতা
গোসলখানায় উলঙ্গ অবস্থায় একাকী গোসল করার সময় বা এমন পায়জামা পরিধান করে গোসল করার সময় যা শরীরের সাথে লেগে যাওয়ার কারণে উরু ইত্যাদির আকৃতি ও লাবন্যতা স্পষ্ট হয়ে উঠে, এরূপ অবস্থায় কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ দিবেন না।
গোসলের কারণে সর্দি বা কাশি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তখন?
যদি কারো সর্দি, কাশি বা চোখের রোগ থাকে এবং তার প্রবল ধারণা হয় যে, মাথার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করে বা ডুব দিয়ে গোসল করলে তার সে সমস্ত রোগ বেড়ে যেতে পারে বা অন্য কোন রোগে সে আক্রান্ত হতে পারে, তাহলে সে কুলি করে ও নাকে পানি দিয়ে ঘাড়ের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করে গোসল করবে এবং সম্পূর্ণ মাথায় ভিজা হাত বুলিয়ে নিবে এরূপ করলে তার গোসল আদায় হয়ে যাবে। সুস্থ হওয়ার পর সে শুধুমাত্র মাথা ধৌত করলে চলবে। নতুনভাবে পুনরায় তাকে গোসল করতে হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩১৮ পৃষ্ঠা)
বালতিতে পানি নিয়ে গোসল করার সময় সাবধানতা অবলম্বন
যদি বালতির মাধ্যমে গোসল করে তখন সতর্কতা মূলক বালতি টুল (STOOL) বা চৌকি ইত্যাদির উপর রাখবেন যাতে বালতিতে ব্যবহৃত পানির ছিটা না পড়ে, অনুরূপ গোসলের কাজে ব্যবহৃত মগও নিচে রাখবেন না।
চুলের জট
যদি চুলে জট পড়ে যায় তাহলে গোসল করার সময় তা খুলে তাতে পানি প্রবাহিত করা আবশ্যক নয়। (প্রাগুক্ত)
তিন: কিছু গুরুত্বপুর্ণ বিষয়
কোরআন শরীফ পড়া বা স্পর্শ করার দশটি আদব
(১) যার উপর গোসল ফরয তার জন্য মসজিদে প্রবেশ করা, তাওয়াফ করা, কোরআন শরীফ স্পর্শ করা, কোরআন শরীফ স্পর্শ না করে এর কোন আয়াত বা সূরা মুখস্থ পড়া, কোরআন শরীফের কোন আয়াত লিখা, আয়াতের তাবিজ লিখা (এটা ঐ অবস্থায় হারাম যখন কাগজ স্পর্শ করা পাওয়া যাবে। যাতে আয়াতে কোরআন আছে আর যদি কাগজ স্পর্শ না করে লিখে তাহলে জায়েয) (অপ্রকাশিত ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাত) এমন তাবিজ স্পর্শ করা, এমন আংটি স্পর্শ করা বা পরিধান করা যাতে কোরআন শরীফের আয়াত বা হুরুফে মুকাত্তিয়াত লিখিত আছে সম্পূর্ণরূপে হারাম। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা) (মোম দ্বারা জামানো, প্ল্যাস্টিক দ্বারা মোড়ানো কাপড় বা চামড়াতে সেলাই করা তাবিজ স্পর্শ করলে বা গাঁয়ে দিলে কোন অসুবিধা নেই।)
(২) যদি কোরআন শরীফ জুজদানের (গিলাফ) মধ্যে থাকে, তাহলে অযু বা গোসল বিহীন অবস্থায় জুজদান স্পর্শ করলে কোন অসুবিধা নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা)
(৩) অনুরূপভাবে অযু বা গোসলবিহীন অবস্থায় এমন কাপড় বা রুমাল দ্বারাও কোরআন শরীফ স্পর্শ করা জায়েয যা নিজের বা কোরআন শরীফের অধীনে নয়। (প্রাগুক্ত)
(৪) জামার আস্তিন, (ওড়না, শাড়ি) আঁচল ইত্যাদি দ্বারা এমন কি চাদরের এক পার্শ্ব কাঁধের উপর রেখে অন্য পার্শ্ব দ্বারাও কোরআন শরীফ স্পর্শ করা হারাম। কেননা, এ সমস্ত কাপড় পরিধানকারীর অধীনস্থ। (প্রাগুক্ত)
(৫) দোয়ার নিয়্যতে বা বরকত লাভের উদ্দেশ্যে কোরআন শরীফের কোন আয়াত অযু বা গোসলবিহীন অবস্থায় পাঠ করলে কোন অসুবিধা নেই। যেমন দোয়া বা বরকতের লাভের উদ্দেশ্যে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحيْمِ পড়লে বা শোকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ পড়লে বা কোন মুসলমানের মৃত্যুর সংবাদ বা কোন দুঃখজনক সংবাদ শুনে اِنَّا لِلّٰهِ وَ اِنَّاۤ اِلَيْهِ رٰجِعُوْنَ পড়লে বা প্রশংসার নিয়্যতে সম্পূর্ণ সূরা ফাতিহা বা আয়াতুল কুরসী বা সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করলে এবং ঐগুলো পাঠ করার মধ্যে কোরআন তিলাওয়াতের নিয়্যত না থাকলে অযু বা গোসলবিহীন অবস্থায় পাঠ করাতে কোন অসুবিধা নেই। (প্রাগুক্ত)
(৬) প্রশংসার নিয়্যতে ‘قُلْ’ শব্দ ব্যতীত তিন قُلْ অর্থাৎ সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা যাবে। কিন্তু ‘قُلْ’ শব্দ সহ প্রশংসার নিয়তেও ঐ তিনটি সুরা পাঠ করা যাবে না। কেননা, তখন তা কোরআনের আয়াত হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে নিয়্যত কার্যকর হবে না। (প্রাগুক্ত)
(৭) অযু বিহীন কোরআন শরীফ বা কোরআন শরীফের কোন আয়াত স্পর্শ করা হারাম। তবে কোরআন শরীফ স্পর্শ না করে মুখস্থ বা দেখে দেখে পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা)
(৮) যে পাত্র বা বাটিতে কোরআন শরীফের কোন আয়াত বা সূরা লিখিত আছে, তা অযু ও গোসলবিহীন অবস্থায় স্পর্শ করা হারাম। (প্রাগুক্ত)
(৯) কোরআন শরীফের সূরা বা আয়াত লিখিত পাত্র বা বাটি ব্যবহার করা সকলের জন্য মাকরূহ তবে বিশেষ করে আরোগ্য লাভের নিয়্যতে তাতে পানি নিয়ে পান করলে কোন অসুবিধা নেই।
(১০) ফার্সী, উর্দূ, বাংলা বা যে কোন ভাষাতেই কোরআন শরীফ অনুবাদ হোক না কেন, কোরআন শরীফের সে অনুবাদও পড়া ও স্পর্শ করার হুকুম কোরআন শরীফের হুকুমেরই অনুরূপ। অর্থাৎ তাও বিনা অযু ও বিনা গোসলে স্পর্শ ও পড়া যাবে না। (প্রাগুক্ত)
অযু ছাড়া ধর্মীয় কিতাবাদি স্পর্শ করা
অযুবিহীন কিংবা যার উপর গোসল ফরয হয়েছে তার জন্য ফিকাহ, তাফসীর ও হাদীসের কিতাবাদি স্পর্শ করা মাকরূহ। তবে যদি সে সমস্ত কিতাবাদি কোন কাপড় দ্বারা যদিও তা পরিহিত বা মাথা বা কাঁধে জড়ানো হোক না কেন, স্পর্শ করা হয় তাহলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু সে সমস্ত কিতাবে কোরআন শরীফের আয়াত বা আয়াতের অনুবাদ থাকলে তা হাতে স্পর্শ করা হারাম। (প্রাগুক্ত)
বিনা অযুতে ইসলামী বই, রিসালা, সংবাদপত্র ইত্যাদি পড়া ও স্পর্শ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা অপরিহার্য। কেননা, তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোরআন শরীফের আয়াত বা আয়াতের তরজমা (অনুবাদ) বিদ্যমান থাকে।
অপবিত্র অবস্থায় দরূদ শরীফ পাঠ করা
যার উপর গোসল ফরয হয়েছে তার জন্য দরূদ শরীফ, দোয়া ইত্যাদি পড়াতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু সর্বোত্তম হলো, অযু বা কুলি করে পড়া। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৭পৃষ্ঠা) আযানের জবাব দেয়াও তার জন্য জায়িয। (ফতোওয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা)
আঙ্গুলে কালির (INK) দাগ জমে থাকলে তখন?
রান্নাকারীর নখে আটা, লিখকের নখে কালির দাগ এবং সর্ব সাধারনের গায়ে মশা-মাছির বিষ্টা লেগে থাকলে এবং গোসল করার সময় তা দৃষ্টি গোচর না হলে গোসল হয়ে যাবে। তবে দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর তা পরিস্কার করে নেয়া এবং সে স্থান ধৌত করে নেয়া আবশ্যক। আর ঐগুলো বিদ্যমান থাকা অবস্থায় যে নামায আদায় করা হয়েছিল তা শুদ্ধ হয়ে যাবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা)
ছেলেমেয়ে কখন বালিগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) হয়?
ছেলের ১২ বছর আর মেয়ের ৯ বছরের কম বয়স পর্যন্ত কখনো বালিগ বালিগা (প্রাপ্ত বয়স্ক) হয় না এবং ছেলে মেয়ে উভয়েই হিজরী সন অনুসারে পরিপূর্ণ ১৫ বছরে অবশ্যই শরয়ী বালিগ বালিগা। যদিও বালিগ হওয়ার নিদর্শন প্রকাশ না পায়। এই বয়সের মধ্যে যদি নিদর্শন পাওয়া যায়, অর্থাৎ ছেলে বা মেয়ের ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাত (অর্থাৎ মনি বের হয়) বা মেয়ের হায়েজ (ঋতুস্রাব) হয়। অথবা সহবাসের মাধ্যমে ছেলে মেয়েকে গর্ভবতী করে দিলো। অথবা সহবাসের কারণে মেয়ে গর্ভবতী হয়ে গেলো। তাহলে নিঃসন্দেহে তারা বালিগ বালিগা এবং যদি নিদর্শন না থাকে, কিন্তু তারা নিজেরাই বলছে আমরা বালিগ বালিগা এবং বাহ্যিক ভাবে তাদের কথা মিথ্যা প্রতিপন্ন করা যাচ্ছে না। তখনো তাদেরকে বালিগ বালিগা হিসেবে গন্য করা হবে এবং প্রাপ্ত বয়ষ্কের সমস্ত হুকুম আহকাম তাদের উপর প্রয়োগ হবে। আর ছেলের দাঁড়ি গোফ বা মেয়ের স্তন বৃদ্ধি হোক বা না হোক কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১৯তম খন্ড, ৬৩০ পৃষ্ঠা)
কিতাবাদি রাখার নিয়ম
(১) সবার উপরে কোরআন শরীফ রাখতে হবে, এর নিচে তাফসীর, এর নিচে হাদীস, এর নিচে ফিকাহ, এর নিচে অন্যান্য ইসলামী বই রাখতে হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৭ পৃষ্ঠা)
(২) কিতাবের উপর অন্য কোন জিনিস এমন কি কলমও রাখা যাবে না, বরং যে সিন্দুক বা আলমারিতে কিতাব রাখা হয়েছে তার উপরেও কিছু রাখা যাবে না। (প্রাগুক্ত, ৩২৮ পৃষ্ঠা)
ধর্মীয় বইয়ের পাতা দিয়ে ঠোঙা বানানো
(১) মাসয়ালার বা ধর্মীয় বইয়ের পাতা দিয়ে ঠোঙা বানানো, যে দস্তরখানা বা বিছানাতে কোন পংক্তি ইত্যাদি লিখা থাকে তা ব্যবহার করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩২৮ পৃষ্ঠা)
(২) প্রত্যেক ভাষার বর্ণমালার প্রতি আদব রক্ষা করা উচিত। (বিস্তারিত জানার জন্য ফয়যানে সুন্নাতের ‘ফয়যানে বিসমিল্লাহ’ অধ্যায়টি ভালভাবে পড়ে নিন)
(৩) জায়নামাযের কোণায় সচরাচর কোম্পানীর নামের চিট (কাপড়ের টুকরো) সেলাই করা থাকে। তা ছিড়ে ফেলে দিন।
জায়নামাযে কা’বা শরীফের ছবি
যে সমস্ত জায়নামাযে পবিত্র কা’বা শরীফের বা সবুজ গুম্বজের নকশা অংকিত থাকে, সে সমস্ত জায়নামাযে নামায পড়লে পবিত্র নকশাতে পা বা হাঁটু পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নামাযে এরূপ নকশাযুক্ত জায়নামায ব্যবহার করা উচিত নয়। (ফতোওয়ায়ে আহলে সুন্নাত)
কুমন্ত্রণার একটি কারণ
গোসলখানাতে প্রস্রাব করলে মনে ওয়াসওয়াসার (কুমন্ত্রণার) সৃষ্টি হয়। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন মুগাফ্ফাল رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ হতে বর্ণিত: “রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم গোসলখানাতে প্রস্রাব করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেন: এতে সচরাচর মনে ওয়াসওয়াসার (কুমন্ত্রণার) সৃষ্টি হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, ১ম খন্ড, ৪৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-২৭)
চার: তায়াম্মুমের পদ্ধতি,
তায়াম্মুমের বর্ণনা
তায়াম্মুমের ফরয সমূহ :-তায়াম্মুমের ফরয তিনটি যথা: (১) নিয়্যত করা, (২) সমস্ত মুখমন্ডল মাসেহ করা, (৩) কনুইসহ উভয় হাত মাসেহ করা। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫৩-৩৫৫ পৃষ্ঠা)
তায়াম্মুমের ১০টি সুন্নাত
(১) بِسْمِ الله পাঠ করা, (২) উভয় হাত মাটিতে মারা, (৩) উভয় হাত মাটিতে মারার পর প্রথমে উভয় হাত সামনের দিকে নিয়ে পরে পিছনের দিকে ফিরিয়ে আনা। (৪) মাটিতে হাত মারার সময় আঙ্গুল সমূহ ফাঁক রাখা, (৫) উভয় হাত মাটি থেকে উঠানোর পর ঝেড়ে ফেলা অর্থাৎ এক হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির গোঁড়া অপর হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির গোঁড়ার সাথে আঘাত করে ধুলা-বালি ঝেড়ে ফেলা। তবে আঘাত করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন তালির আওয়াজ না হয়, (৬) প্রথমে মুখমন্ডল তারপর উভয় হাত মাসেহ করা, (৭) মুখমন্ডল মাসেহ করার সাথে সাথেই হাত মাসেহ করা, মাঝখানে বিরতি গ্রহণ না করা, (৮) প্রথমে ডান হাত তার পর বাম হাত মাসেহ করা, (৯) দাঁড়ি খিলাল করা, (১০) আঙ্গুল সমূহ খিলাল করা যদি তাতে ধূলা-বালি লেগে থাকে। আর যদি ধূলা-বালি লেগে না থাকে যেমন পাথর ইত্যাদিতে হাত মারা হলো যাতে কোন ধূলা-বালি নেই তাহলে খিলাল করা ফরয। খিলাল করার জন্য পুনরায় মাটিতে হাত মারার প্রয়োজন নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫৬ পৃষ্ঠা)
তায়াম্মুমের পদ্ধতি (হানাফী)
প্রথমে তায়াম্মুমের নিয়্যত করুন (অন্তরের ইচ্ছাই হলো নিয়্যত। তবে মুখে উচ্চারণ করলেও ভাল। যেমন বলবেন: আমি অযুহীনতা কিংবা গোসলহীনতা কিংবা উভয়টি হতে পবিত্রতা অর্জনের জন্য এবং নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য তায়াম্মুম করছি।) অতঃপর بِسْمِ الله পড়ে উভয় হাতের আঙ্গুল সমূহ ফাঁক রেখে উভয় হাত মাটি জাতীয় কোন পবিত্র বস্তু যেমন-পাথর, চুনা, ইট, দেয়াল, বালি ইত্যাদিতে মেরে প্রথমে উভয় হাত সামনের দিকে নিয়ে তারপর পিছনের দিকে ফিরিয়ে আনবেন। হাতে যদি ধূলা-বালি বেশি লেগে থাকে তা ঝেড়ে নেবেন। অতঃপর উভয়হাত দ্বারা সমস্ত মুখমন্ডল এভাবে মাসেহ করবেন যাতে মুখমন্ডলে কোন অংশই বাদ না যায়। যদি চুল পরিমাণ স্থানও মাসেহ থেকে বাদ যায় তাহলে তায়াম্মুম হবে না। অনুরূপভাবে দ্বিতীয়বার মাটিতে হাত মেরে তা দ্বারা উভয় হাতের নখ থেকে কনুই সহ মাসেহ করবেন। (হাত মাসেহ করার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো, বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ব্যতীত বাকী চারটি আঙ্গুল একত্রিত করে ঐগুলোর পেট ডানহাতের পিঠের উপর রাখবেন। তারপর ঐ চারটি আঙ্গুলের পেট দ্বারা ডান হাতের আঙ্গুল সমূহের অগ্রভাগ হতে কনুই ডানহাতের পিঠ মাসেহ করবেন। অতঃপর বামহাতের তালু দ্বারা কনুই হতে কব্জী পর্যন্ত ডানহাতের পেট মাসেহ করবেন এবং বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের পেট দ্বারা ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের পিঠ মাসেহ করবেন। অনুরূপভাবে ডান হাত দ্বারা বাম হাতও মাসেহ করবেন। আর যদি একবারেই এক হাতের সম্পূর্ণ তালু ও আঙ্গুল সমূহ দ্বারা অপর হাত মাসেহ করে নেন তখনও মাসেহ শুদ্ধ হবে। চাই কুনই হতে আঙ্গুল পর্যন্ত মাসেহ করুন বা আঙ্গুল হতে কনুই পর্যন্ত মাসেহ করুন সর্বাবস্থায় মাসেহ শুদ্ধ হবে। তবে এভাবে মাসেহ করা সুন্নাতের বিপরীত। তায়াম্মুমের মধ্যে মাথা ও পা মাসেহ করার কোন বিধান নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫৩, ৩৫৪, ৩৫৬ পৃষ্ঠা)
তায়াম্মুমের ২৫টি মাদানী ফুল
(১) যে সমস্ত বস্তু আগুনে পুড়ে ছাইয়ে পরিণত হয় গলেও না, নরমও হয় না তা মাটি জাতীয় এবং তা দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয। বালি, চুনা, সুরমা, গন্ধক, পাথর (মার্বেল) , হলদেহীরা, মুক্তা, ফিরোযা পাথর, আকিক পাথর ইত্যাদি ধাতব পদার্থ দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয। চাই ঐগুলোতে ধূলা-বালি থাকুক বা না থাকুক। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫৭ পৃষ্ঠা। আল বাহরুর রায়িক্ব, ১ম খন্ড, ২৫৭ পৃষ্ঠা)
(২) পোড়ানো ইট, চীনামাটি বা কাদামাটির বরতন দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয। তবে ঐগুলোতে যদি এমন কোন জিনিসের চিহ্ন থাকে যা মাটি জাতীয় নয় যেমন কাচ ইত্যাদির চিহ্ন (আবরণ) থাকে, তাহলে ঐগুলো দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫৮ পৃষ্ঠা) সাধারণত চিনা মাটির প্লেটে কাঁচের কারুকাজ থাকলে এর দ্বারা তায়াম্মুম হবে না।
(৩) যে সমস্ত মাটি, পাথর দ্বারা তায়াম্মুম করতে হবে তা পাক হতে হবে অর্থাৎ তাতে নাপাকীর কোন চিহ্নই থাকতে পারবে না বা পূর্বে নাপাকী ছিলো কিন্তু বর্তমানে শুকিয়ে যাওয়ার কারণে নাপাকীর চিহ্ন নেই এরূপও হতে পারবে না। (প্রাগুক্ত, ৩৫৭ পৃষ্ঠা) (জমিন, দেয়াল এবং ধূলাবালি ইত্যাদিতে নাপাকী পতিত হওয়ার কারণে যদি তা নাপাক হয়ে যায়, অতঃপর রোদের তাপে বা বাতাসে সে নাপাকী শুকিয়ে যাওয়ার পর তাতে নাপাকীর কোন চিহ্ন বিদ্যমান না থাকে, তাহলে তা পবিত্র হয়ে যাবে এবং তাতে নামায আদায় করা জায়েয হবে কিন্তু তা দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয হবে না।)
(৪) যে মাটি বা পাথর দ্বারা তায়াম্মুম করব তাতে যদি কোন সময় নাপাকী ছিলো বলে সন্দেহ সৃষ্টি হয় সে সন্দেহ অমূল্যক ও ভিত্তিহীন। (প্রাগুক্ত, ৩৫৭ পৃষ্ঠা)
(৫) যদি কোন লাকড়ী, কাপড়, মাদুর ইত্যাদিতে এতটুকু পরিমাণ বালি থাকে যে, এতে হাত মারলে আঙ্গুলের চাপ ফুটে উঠবে, তাহলে তা দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয। (প্রাগুক্ত, ৩৫৯ পৃষ্ঠা)
(৬) চুনা, মাটি বা ইটের দেয়াল, চাই ঘরের হোক বা মসজিদের হোক তা দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয। কিন্তু তাতে অয়েল প্রিন্ট, প্ল্যাস্টিক প্রিন্ট, মাইট ফিনিস, ওয়াল পেপার ইত্যাদি এমন কোন জিনিস থাকতে পারবে না যা মাটি জাতীয় নয়। দেয়ালে মার্বেল পাথর থাকলে তা দ্বারা তায়াম্মুম করার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হবে না।
(৭) যার অযু নেই বা ঘরে গোসল করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে কিন্তু সে পানি ব্যবহারে অক্ষম তাহলে সে অযু ও গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে নেবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৪৬ পৃষ্ঠা)
(৮) রুগ্ন ব্যক্তি পানি দ্বারা অযু বা গোসল করতে গেলে তার রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার বা দেরীতে সুস্থ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে বা তার বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে যে, যখনই সে পানি দ্বারা অযু বা গোসল করেছে তখনই তার রোগ বেড়ে গেছে অথবা কোন মুসলিম অভিজ্ঞ ডাক্তার যিনি বাহ্যিক দৃষ্টিতে ফাসিক নন, তাকে বলে দিয়েছেন যে, সে পানি ব্যবহার করলে তার রোগের প্রচুর ক্ষতি হবে, তাহলে উপরোক্ত অবস্থা সমূহতে সে তায়াম্মুম করতে পারবে। (দুররে মুখতার ও রদ্দে মুহতার, ১ম খন্ড, ৪৪১-৪৪২ পৃষ্ঠা)
(৯) যদি মাথার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করলে তা ক্ষতিকর হয় তাহলে গলার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত করে গোসল করবে এবং সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৪৭ পৃষ্ঠা)
(১০) যেখানে চতুর্দিকে এক মাইলের ভিতরে পানি পাওয়া না যায়, সেখানে তায়াম্মুম করা যাবে। (প্রাগুক্ত)
(১১) যদি নিজের কাছে এতটুকু পরিমাণ জমজম শরীফের পানি থাকে যা দ্বারা অযু করা যাবে। তাহলে তায়াম্মুম করা জায়েয হবে না। (প্রাগুক্ত)
(১২) এমন শীত যে, পানিতে গোসল করলে মারা যাওয়ার কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে এবং গোসল করার পর শীত নিবারণের কোন উপকরণও নেই তখনও তায়াম্মুম করা জায়েয। (প্রাগুক্ত, ৩৪৮ পৃষ্ঠা)
(১৩) কয়েদী ব্যক্তিকে যদি কারা কর্তৃপক্ষ অযু করতে না দেয় তাহলে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করে নেবে কিন্তু পরে অযু করে সে নামায পুনরায় আদায় করতে হবে। আর যদি শত্রুরা বা কারা-কর্তৃপক্ষ কয়েদীকে নামাযও আদায় করতে না দেয় তাহলে ইশারার মাধ্যমে নামায আদায় করবে এবং পরে সে নামায পুনরায় আদায় করে দিতে হবে। (প্রাগুক্ত, ৩৪৯ পৃষ্ঠা)
(১৪) যদি প্রবল ধারণা হয় যে, পানি তালাশ করতে গেলে কাফেলা চলে যাবে, তখনও তায়াম্মুম করা জায়েয। (প্রাগুক্ত, ৩৫০ পৃষ্ঠা)
(১৫) মসজিদে ঘুমানো অবস্থায় গোসল ফরয হয়ে গেলে যেখানেই ছিলো সেখানেই তাড়াতাড়ি তায়াম্মুম করে নেবে। এটিই বাঁচার একমাত্র উপায়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংগ্রহীত) , ৩য় খন্ড, ৪৭৯ পৃষ্ঠা) অতঃপর তাড়াতাড়ি মসজিদের বাইরে চলে আসবে, বের হতে দেরী করা হারাম। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫২ পৃষ্ঠা)
(১৬) সময় এতই সংকীর্ণ যে, অযু বা গোসল করতে গেলে নামায কাযা হয়ে যাবে। তাহলে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করে নেবে। অতঃপর অযু বা গোসল করে নামায পুনরায় আদায় করা আবশ্যক।
(ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংগ্রহীত) , ৩য় খন্ড, ৩০৭ পৃষ্ঠা)
(১৭) মহিলা হায়েজ বা নিফাস হতে পবিত্র হলো কিন্তু পানি ব্যবহারে অক্ষম, তাহলে তায়াম্মুম করে নেবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫২ পৃষ্ঠা)
(১৮) যদি কেউ এমন স্থানে আছে, যেখানে অযু করার জন্য পানিও নেই এবং তায়াম্মুম করার জন্য পবিত্র মাটিও নেই তাহলে সে নামাযের সময় নামাযী ব্যক্তির রূপ ধারণ করবে অর্থাৎ নামাযের নিয়্যত না করে নামাযের যাবতীয় কার্যাবলী আদায় করবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫৩ পৃষ্ঠা) কিন্তু পরে পবিত্র পানি বা মাটি পাওয়া গেলে অযু বা তায়াম্মুম করে তাকে সে নামায পুনরায় আদায় করে নিতে হবে।
(১৯) অযু ও গোসল উভয় ক্ষেত্রে তায়াম্মুমের পদ্ধতি একই রূপ। (জওহারা, ২৮ পৃষ্ঠা)
(২০) যার উপর গোসল ফরয তার জন্য অযু ও গোসল উভয়টির জন্য দুইবার তায়াম্মুম করার প্রয়োজন নেই বরং এক তায়াম্মুমেই অযু ও গোসল উভয়ের নিয়্যত করে নিলে আদায় হয়ে যাবে। আর শুধুমাত্র গোসলে বা শুধুমাত্র অযুর নিয়্যত করলেও চলবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ৩৫৪ পৃষ্ঠা)
(২১) যে সমস্ত কারণে অযু ভেঙ্গে যায় বা গোসল ফরয হয় তা দ্বারা তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়ে যায় এবং পানি পাওয়া গেলে বা পানি ব্যবহারে সক্ষম হলেও তায়াম্মুম ভেঙ্গে যায়। (প্রাগুক্ত, ৩৬০ পৃষ্ঠা)
(২২) যদি মহিলারা নাকে নাকফুল ইত্যাদি পরিধান করে থাকে, তবে তায়াম্মুম করার সময় তা খুলে নিতে হবে। অন্যথায় নাক ফুলের স্থানে মাসেহ সম্পাদন হবে না। (প্রাগুক্ত, ৩৫৫ পৃষ্ঠা)
(২৩) ঠোঁটের যে অংশ সচারাচর মুখ বন্ধ থাকা অবস্থায় দেখা যায়, তাতেও মাসেহ করা জরুরী। যদি মুখম-ল মাসেহ করার সময় কেউ জোরে ঠোঁট দাবিয়ে ফেলার কারণে ঠোঁটের কিছু অংশ মাসেহ থেকে বাদ যায়, তবে তায়াম্মুম হবে না। অনুরূপ মাসেহ করার সময় জোরে চোখ বন্ধ করলেও তায়াম্মুম আদায় হবে না। (প্রাগুক্ত)
(২৪) তাতে আংটি, ঘড়ি ইত্যাদি পরিধান করে থাকলে তা খুলে তার নিচে মাসেহ করা ফরয। ইসলামী বোনেরাও হাতের চুড়ি ইত্যাদি সরিয়ে তার নিচে মাসেহ করবেন। তায়াম্মুমের ক্ষেত্রে অযুর চেয়ে খুব বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা অপরিহার্য্য। (প্রাগুক্ত)
(২৫) রুগ্ন ও হাত-পা বিহীন ব্যক্তি নিজে তায়াম্মুম করতে অক্ষম হলে অন্য ব্যক্তি তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। এক্ষেত্রে যে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে তার নিয়্যত গ্রহণযোগ্য হবে না, বরং যাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে তাকেই নিয়্যত করতে হবে। (প্রাগুক্ত, ৩৫৪ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ২৬ পৃষ্ঠা)
মাদানী পরামর্শ: অযুর আহকাম শিখার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত রিসালা “অযুর পদ্ধতি” এবং নামায শিখার জন্য “নামাযের পদ্ধতি” নামক রিসালা অধ্যয়ন করলে বিশেষ উপকার হবে।
ইয়া রব্বে মুস্তফা عَزَّوَجَلَّ! আমাদেরকে বারবার গোসলের মাসয়ালা পড়ার, বুঝার এবং অপরকে বুঝানোর এবং সুন্নাত অনুসারে গোসল করার তাওফীক দান করো। اٰمِين بِجا هِ النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم اٰمِين بِجا هِ النَّبِىِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
জাযাকাল্লাহু খাইরান'
যদি লেখনির মাধ্যমে কোন প্রকার ভুল হয়ে থাকে মুসলিম ভাই হিসেবে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,